ঢাকে বোল উঠেছে- ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’। মণ্ডপে-মন্দিরে বাজছে বিদায়ের শঙ্খ-উলুধ্বনি। দেবী দুর্গা ষষ্ঠী থেকে দশমী পাঁচ দিন মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে দোলায় চড়ে ফিরে যাচ্ছেন কৈলাশে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।
শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) হিন্দু ধর্মাবলীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার শেষ দিন। বিজয়া দশমীতে আয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর বিদায় নেন উমা দেবী। সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল ভক্তদের ঢল। সকাল ৭টা থেকে শুরু করে ৮টা ৫১ মিনিটের মধ্যে পূজার আয়োজন সম্পন্ন হয়। টানা মন্ত্র পাঠে ভক্তরা অঞ্জলি নিয়েছে নগরের সব পূজামণ্ডপে। সঙ্গে ছিল ঢাকের বাদ্য, নাচ, সিঁদুর খেলা। দুপুর ২টায় ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানায় ভক্তরা।
বৃহস্পতিবার নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় মহানবমী কল্পারম্ভ বিহিত ও সন্ধিপূজা। নানা আচারের মধ্যদিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন। সাধারণত মহাষ্টমীর শেষ এবং মহানবমী তিথির সংযুক্ত সময়ে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সন্ধিক্ষণেই দেবী দুর্গার হাতে অসুর বধ হয়েছিল। সকালে পূজার আয়োজন শেষে চলে দুর্গা বিসর্জনের প্রস্তুতি। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, কর্ণফুলীর অভয়মিত্র ঘাট, আসকার দীঘি, গোয়ালপাড়া পুকুরসহ স্ব স্ব পাড়ার পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে পর্দা নামছে পাঁচদিনের উৎসব। আসছে বছর পূজার অপেক্ষায় থাকা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শচীন দেব বর্মণের গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গাইছেন, ‘বাজে ঢোল নরম গরম তালেতে, বিসর্জনের ব্যথা ভোলায় আগমনীর খুশিতে।’
বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ (শুক্রবার) সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। তাছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিজয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জয়নিউজবিডিডটকম চেয়ারম্যান আ জ ম নাছির উদ্দীন। শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব ধর্মীয় গণ্ডি পেরিয়ে সর্বজনীনতায় রূপ পেয়েছে। এই উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যেকে তুলে ধরে। তৈরি হয় সামাজিক মেলবন্ধন। এই মেলবন্ধন দলমত নির্বিশেষে সকলকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। এই উৎসব যাতে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং কল্যাণ বয়ে আনে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মেয়র।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত ও অসীম কুমার দেব এক যুক্ত বিবৃতিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এদিকে পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ সূর্যাস্তের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সব পূজা কমিটির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।