আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি করে বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে বন্দর থেকে খালাস হয়ে যাওয়া দুই লরি মদের চালানে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৪ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আটক মদের লরি দুটিতে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে এ তথ্য জানায় কাস্টমস।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মদভর্তি দুটি লরির চালান আটকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় কাস্টমস। কিন্তু আটকের আগেই জালিয়াত চক্র সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মদভর্তি লরি দুটি খালাস করে বন্দর থেকে বের করে নেয় বলে জানতে পারে কাস্টমসের এআইআর (চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিজস্ব গোয়েন্দা) শাখা।
এরপর কাস্টমসের পক্ষ থেকে মদবাহী লরি দুটি আটকে র্যাব, হাইওয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হয়। ওই দিন রাতেই উন্নত প্রযুক্তির সহযোগিতায় গাড়ি দুটির অবস্থান শনাক্ত করে র্যাব।
এরপর শুক্রবার (২২ জুলাই) দিনগত রাতেই নারাইয়ণগঞ্জের সোনারগাঁ হতে লরি দুটি আটক করে র্যাব। পরে কাস্টমসের এআইআর শাখার টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে লরি দুটি খুলে মদের বড় চালানের সত্যতা পান।
কাস্টমস জানিয়েছে, কুমিল্লা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) দুই প্রতিষ্ঠানের নামে টেক্সটাইলের মেশিন ও সুতা ঘোষণায় আমদানি হওয়া মদের চালান দুটির আমদানিকারক পৃথক দেখানো হলেও খালাসের দায়িত্বে ছিল একই সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানাধীন কেভি দোভাষ লেনের সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাফর আহমদ মদের চালান দুটির খালাস নেয়। গত ২০ জুলাই সন্ধ্যার পর পৃথক দুই প্রতিষ্ঠানের নামে আসা লরি দুটির পণ্য খালাসের জন্য শুল্কায়ন করা হয়।
কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোং লিমিটেডের টেক্সটাইল সুতা এবং ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের নামে রোবিং মেশিনের ঘোষণা দিয়ে মদের চালান দুটি আমদানি করে জালিয়াত চক্র। তবে যে দুই আইপি দেখিয়ে মদের চালান খালাস হয়, সেই আসল দুই আইপি দিয়ে আগেই পণ্য আমদানি ও খালাস নেয় আসল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দুটি।
এদিকে, মদভর্তি লরি দুটিতে পাসপোর্ট স্কচ হুইস্কি, ভ্যালান্টাইনস স্কচ হুইস্কি, ম্যাটেউস দ্য অরিজিনাল ওয়াইন, চিভাস রিগাল স্কচ হুইস্কি, জনি ওয়াকার রেড লেবেল বা ব্ল্যাক লেবেল স্কচ হুইস্কি, টিচার্স হাইল্যান্ড স্কচ হুইস্কি, স্মারনফ ভদকা ও রেড রোজ ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায় বলে জানায় কাস্টমস।
কাস্টমসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার সাইফুল হক বলেন, ২২ জুলাই রাত ৯টার দিকে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া যায় জালিয়াত চক্র দুটি মদের চালান খালাস করবে। এরপর দ্রুত খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আরও আগেই শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চালান দুটি খালাস হয়ে গেছে।
‘আমরা দ্রুত লরি দুটি আটকে পদক্ষেপ নিই। র্যাব, হাইওয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থারগুলোর সহযোগিতা চাই। রাতে র্যাব থেকে কন্টেইনারবাহী লরি দুটি আটকের তথ্য দেওয়া হয়। আমরা দ্রুত নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কন্টেইনার খুলে মদের বিষয়ে নিশ্চিত হই। মূলত বেপজার (বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ) ইস্যুকৃত আইপি জালিয়াতি করে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মদের চালান দুটি খালাস নেওয়া হয়।’
এ কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, দুই কন্টেইনারে ১৩৩০ কার্টনে ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক ৫ লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়। চালান দুটির শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বৈধ উপায়ে আসলে এতে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব পেতো সরকার। পুরো রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চালান দুটি খালাস নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান ও চালান দুটি খালাসে দায়িত্বপালনকারী কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টিতে কারো গাফিলতি কিংবা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জেএন/কেকে