মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার মিল্টনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও ডিবির একটি দল।
গ্রেপ্তার চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন ৩১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা।
ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্য বিবরণী ও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) সাহাদাত হোসেন সুমা।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাকে লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
গত ১৩ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ৫১৩টি পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে গোয়েন্দা দল খবর পায় প্রশ্নফাঁসের। ইডেন কলেজ কেন্দ্র থেকে থেকে প্রশ্নপত্রের উত্তরসহ চাকরি প্রার্থী সুমন জোয়ার্দার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার প্রবেশপত্রের উল্টো পিঠে ৭০টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর লেখা ছিল।
পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুমন ও সাইফুলকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা পরীক্ষার আগেই প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করে।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক আবদুল খালেক বাদী হয়ে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পরীক্ষা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জোয়ার্দার জানান, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে তার মোবাইলে পটুয়াখালীর সাইফুল ও টাঙ্গাইলের খোকন উত্তরপত্র পাঠান।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মে ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৫১৩টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৪ মে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রভাষক রাশেদুল, মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবীব ও অফিস সহকারী নওশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর এক সপ্তাহ পরই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে মাউশি।
ডিবি তেজগাঁও কর্মকর্তারা জানান, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি মাউশি কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন ফাঁস করেছিলেন। তিনি ওই নিয়োগ পরীক্ষার ইডেন কলেজ কেন্দ্র সমন্বয় করার দায়িত্বে ছিলেন। মাউশি কার্যালয় থেকে প্রশ্ন নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তিনি প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাইফুলের কাছে পাঠিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন মাউশিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। তারা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বদলি ও এমপিওভুক্তি, পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবেদন দেওয়াসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে এর আগে জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসে কোনো রাঘববোয়ালকে ছাড়া হবে না। যারাই জড়িত থাকবে তাদের আমরা গ্রেপ্তার করব।’
জেএন/কেকে