চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রীকে হেনস্তা করার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রত্যেককে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপ সিএফসির কর্মী।
সোমবার (২৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান। এর আগে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রী হেনস্তার ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান।
বহিষ্কৃত চারজন হলেন আরবি বিভাগের জুনায়েদ আহমেদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রুবেল হাসান, দর্শন বিভাগের ইমন আহম্মেদ ও একই বিভাগের রাকিব হাসান রাজু। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
এদিকে সম্প্রতি যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া চবি ছাত্রী প্রশাসনকে প্রথমে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার অভিযোগে প্রথমে বলেছিল যে তাকে প্রীতিলতা হলের পাশ থেকে অভিযুক্তরা টেনেহিঁচড়ে আড়ালে নিয়ে যায়। কিন্তু তদন্তকালে সে জানিয়েছে, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পেছনের গলি বা ছোট রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় বন্ধুসহ বসে ছিল। পরে সেখানে গিয়ে অভিযুক্তরা তাদের মারধর ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনাস্থল মূল রাস্তা থেকে ভেতরে হওয়ায় সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ফলে আমাদের কিছুটা দূরের প্রীতিলতা হলের দুই পাশের রাস্তায় থাকা ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করতে হচ্ছে। আর স্টেটমেন্ট ভিন্ন হওয়ায় দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতেও দেরি হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে চবি রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন সেলে থাকা তিনটি অভিযোগের সুরাহা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অভিযোগে অভিযুক্তদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়াও যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্তদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।’
গত রবিবার (১৭ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় সংগীত বিভাগের এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছিল পাঁচ তরুণের বিরুদ্ধে। তখন ওই ছাত্রীকে গাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা হয় এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধুকে ও তাকে মারধর করে মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনতাই করা হয়। পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিলে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া জড়িত পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলাও করেছেন ওই শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়াও পলাতক আছেন আরো একজন।
জেএন/কেকে