বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই দুটির সংক্রমণে লিভার সিরোসিস ও ক্যানসার হতে পারে। সারাবিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসের কোনো না কোনো ধরনে আক্রান্ত। তবে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না তাদের হেপাটাইটিস আছে।
বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের একটি হলো লিভার সিরোসিস। বাংলাদেশে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। এই দুই ভাইরাসজনিত লিভার রোগের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মানুষ এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হয়।
হেপাটাইটিসের ই ধরনটি বিপদজনক হয়ে থাকে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে। এছাড়া হেপাটাইটিসের বি ধরনের সঙ্গে একই সময়ে ডি ধরনেরও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিসের যে ৫ রকম ধরন আছে, তার সবগুলোর সংক্রমণই বাংলাদেশে আছে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস এ ও ই পানিবাহিত রোগ, যা দূষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। বি ও সি রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরল, ভ্যাজাইনাল তরল পদার্থের মাধ্যমে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়।
তবে ডব্লিউএইচও’র লক্ষ্যমাত্রায় ২০২২ সাল থেকে ২০৩০ সাল এই ৮ বছরে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস নির্মূল করা সহজ হবে না জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। হেপাটাইটিস নির্মূলে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা গ্রহণ না করাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন তারা। শিশুদের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি-ইপিআই সেবার মাধ্যমে হেপাটাইটিসের টিকা প্রদান করা হলেও দেশের বিশাল অংশ টিকার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মানুষের মধ্যে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা না থাকাকেও কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এই সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে হেপাটাইটিস নির্মূল করা না গেলেও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুর আলম (ডিউ) বলেন, হেপাটাইটিস নির্মূলে তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন ভিত্তিক কাজ করা প্রয়োজন। আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে এই ভাইরাস সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষ যাতে এ বিষয়ে জানতে পারে। শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। এছাড়াও এই রোগ নির্মূলে প্রয়োজনে একটি করে ইউনিয়নে শতভাগ টিকা প্রদান করার চেষ্টা করতে হবে। এর মাধ্যমে পুরো দেশে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
চিকিৎসার বাইরেও হেপাটাইটিস নির্মূলে সচেতনতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাঠ্যবইয়ে সংযুক্তির মাধ্যমে শিশুকাল থেকে হেপাটাইটিসের সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। এছাড়াও নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, টিকাদান, ওষুধের দাম, চিকিৎসা সেবা, হেপাটাইটিস নির্ণয়ে পরীক্ষার সুযোগ, বিনামূল্যে টিকার ওপরও জোর দেন তারা।
জয়নিউজ/পিডি