রাজধানীর শাহজাহানপুরের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জালে ধরা পরেছে আরও দুই অপরাধী।
তারা হলেন, টিপু হত্যার মাস্টারমাইন্ড সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শর্টগান সোহেল ও হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী মারুফ রেজা সাগর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, রোববার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি মতিঝিল বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন সোহেল ও সাগর। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ব প্রস্তুতির কারণে ওই সুযোগ তারা পাননি। কানাডায় যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জেনেই দিনভর নজরদারিতে রাখা হয় তাদের।
এর আগে, শনিবার এই ডাবল মার্ডারের সঙ্গে যুক্ত আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, জাতীয় পার্টি নেতা জুবের আলম খান রবিন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টিটু, আরিফুর রহমান সোহেল ও খায়রুল।
রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, টিপু হত্যায় এর আগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া জবানবন্দি ও তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিশেষ করে খুনের সন্দেহভাজন সমন্বয়কারী সুমন সিকদার মুসাকে ওমান থেকে গ্রেপ্তার করে দেশে আনা হয়।
তিনি জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গুরুত্ব তথ্য দিয়েছেন। সেসব তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (৩০ জুলাই) মতিঝিল ও আশপাশের এলাকা থেকে জুবের আলম খান রবিন, আরিফুর রহমান সোহেল (ঘাতক সোহেল), মতিঝিল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টিটুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, গ্রেপ্তারদের টিপু হত্যায় কার কি ভূমিকা ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক তথ্যই সামনে আসবে।
এদিকে, গ্রেপ্তারদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে রোববার আদালতে নেওয়া হলে আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে মুসাকে দেশে ফেরানোর পর একাধিক দফায় হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন মুসা। কিলিং মিশনে কার কী ভূমিকা ছিল সেটি তার বক্তব্যে উঠে এসেছিল। মুসার তথ্য যাচাই করতে বিভিন্ন সময় আরও কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে ডিবি। টিপু হত্যা পরিকল্পনায় টিটু, রবিন ও সোহেল সম্পৃক্ত। এর মধ্যে টিটু সবচেয়ে দুর্ধর্ষ। তার সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কীর সঙ্গে এক সময় তার ঘনিষ্ঠতা ছিল।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কীকে হত্যা করা হয়েছিল।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন টিপু হত্যার ঘটনায় শুটার ছিলেন মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। পুরানা পল্টনের আর্মস মিউজিয়াম নামের একটি অস্ত্রের দোকানের গুলি টিপু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। ওই দোকানের মালিক কর্ণধার ইমরান হোসেন জিতুর কাছ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি নিয়ে মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুর রহমান রাকিব পৌঁছে দেন সুমন সিকদার মুসার হাতে। এছাড়া দুবাইয়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টির নির্দেশে ইশতিয়াক আহমেদ জিতু অস্ত্র দেন মোল্লা শামীমের কাছে।
কিলিং মিশনের সময় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন শামীম। বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। মুসার মতো ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরাতে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।
গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাথাড়ি গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দুই খুনের ঘটনায় সর্বশেষ দুজনসহ মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ৪/৫ জন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।
জেএন/কেকে