চট্টগ্রামের মিরসরাইতে বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা উঠোনে, ঘরের পাশের পতিত জমি অথবা শখের ছাঁদ বাগানে পেয়ারা গাছ লাগাননি এমন লোক খুজে পাওয়া দায়।
অনেকেই শখ করে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি উন্নত জাতের থাই পেয়ারা গাছ লাগিয়েছেন। প্রতিটি গাছে ফলন ও বেশ ভালো। থোকায় থোকায় জোড়ায় জোড়ায় চোখ ধাঁধানো লোভনীয় সুদর্শন সুমিষ্ট পেয়ারা,গাছে গাছে ঝুলছে আঙ্গিনা কিংবা শখের বাগানে। কিন্তু এসব পেয়ারা মুখে তোলা দায়।
কারন উপরে ফিটপাট হলেও ভেতরে সদরঘাট বা পোকায় পরিপূর্ণ। উপরের রসালো সুন্দর পরিপাটি চেহারা দেখে মুখে তুলে কামড় দিতেই পোকায় ধরা পঁচা গন্ধে বমি আসার অবস্থা।
মুখ থেকে তুলে থুথু করে দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়েই যেন হাফ ছেড়ে বাছতে চায় যে কেউ কেউ। এমন অবস্থা দু এক বাড়িতে কিংবা দু এক বাগানে নয় বরং প্রতিটি বাড়িতে প্রতিটি বাগানে একই চিত্র।
উপজেলার ১৪ নং হাইতকান্দি ইউনিয়নের শিল্পপতি সামছুল আজম তার গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় শখের বাগান গড়েছেন। আম, কাঠাল, লেবু, আতা, আনার, বরই, মাল্টা, জামরুলসহ নানা প্রকারের ফলের সাথে রোপন করেছন থাই পেয়ারা গাছ।
প্রতিটি গাছে ফলন ও খুব ভালো। কিন্তু সাম্প্রতিক শহর থেকে গ্রামে এসে দেখেন পেয়ারা গাছে প্রচুর ফলন। কিন্তু পেয়ারা গুলি পঁচে গাছের নিচে পড়ে আছে। গাছেও বহু পেয়ারা লোভনীয় হয়ে ঝুলছে। ভালো দেখে পেয়ারা হাতে নিয়ে মুখে দিতেই বেরিয়ে এতো পঁঁচা আরো পোকা।
খাওয়ার অযোগ্য দেখে ফেলে দিয়ে একে পর এক পরখ করতে লাগলেন। গাছের প্রতিটি পেয়ারা প্রায় একই অবস্থা। মনখারাপ করে শখের পেয়ারা গুলি ফেলে দিতে বাধ্য হলেন।
নুর উদ্দিন নামে এক ব্যাক্তি জানান, আমার বাড়িতে দুটি গাছে প্রচুর ফলন হয়েছে। কিন্তু বড় হওয়ার পর লেদা আর পচন ধরায় খাওয়ার অযোগ্য হয়ে গেছে। উপরে দেখতে খুব সুন্দর আর আকর্ষণীয় কিন্তু ভেতরে খুব খারাপ। কিভাবে প্রতিকার পাওয়া যাবে বুঝতেছিনা। পেয়ারা গুলি ফেলে দিতে খুব খারাপ লাগে।
মিরসরাইয়ের নাজিরপাড়ার নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার বাগানেও একাধিক গাছ আছে সেগুলিরও একই অবস্থা। পেয়ারার উপরের অংশ খুবই ভালো আর আকর্ষনীয় কিন্তু ভেতরে লেদা আর পচা। খাওয়ার উপযুক্ত নয়। গাছে শত শত পেয়ারা ধরলেও সব ফেলে দিয়ে বাজার থেকে কিনে খেতে হয়।
মিরসরাই কৃষি কর্মকর্ত রগুনাথ নাহা জানান, পেয়ারায় যখন সুগার আসে বা মিষ্টি ভাব আসতে থাকে তখন এক ধরণের মাছি শুল ফুটিয়ে পেয়ার ভেতরে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেয়ারার ভেতরে সেই ডিম গুলি থেকে লাভা তৈরি হয়।
সেখান থেকেই পেয়ারার ভেতরে পচন ধরে ও লেদা সৃষ্টি হয়। তাই পেয়ারা উপর থেকে দেখতে সুন্দর ও আকর্ষনীয় মনে হলেও ভেতরে পঁচে যায়। এছাড়া তিনি জানান, পেয়ারার লেদা ও পঁচন থেকে রেহাই পেতে দুটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
যেমন পেয়ারায় মিষ্টি ভাব আসার আগেই বা পেয়ারা ছোট থাকতেই ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা। ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে মাছি পেয়ারার উপর বসতে পারবেনা ও পেয়ারায় হুল ফুটিয়ে ডিম পাড়তে পারবেনা। এতে পেয়ারা লেদা ও পঁচন থেকে রক্ষা পাবে।
এছাড়া সেক্স হরমোন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্স হরমোন ফাঁদের মাধ্যমে স্ত্রী হরমোন একটি বাটি বা বোতলের মুখে রেখে তাতে সাবান পানি রেখে পুরষ মাছির জন্য ফাঁদ তৈরি করে তাকে হত্যা করা হয়। এতে পোকা বা মাছির বংশ বৃদ্ধি রোধ করা যায়।
দুটি পদ্ধতি ছাড়াও কিটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে তবে যেহেতু কিটনাশক ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাই কিটনাশক ব্যবহারে কৃষি অফিস থেকে উৎসাহিত করা হয়না। এছাড়া প্রাকৃতিক দুটি পদ্ধতিই কার্যকরী। প্রাকৃতিক দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করে পেয়ারা গাছের পোকা দমন করা সম্ভব।
জেএন/পিআর