রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত সেই মোটরসাইকেলচালক মোল্লা শামীমকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোল্লা শামীসহ আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- মোটরসাইকেলচালক শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু (৩৪), সুমন হোসেন (৩৫), এহতোশাম উদ্দিন চৌধুরী অপু (৩৭) ও শরিফুল ইসলাম হৃদয় (২৭)।
মোল্লা শামীম বেনাপোল হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৫ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে দক্ষিণ গোড়ান থেকে শরিফুল ইসলাম ওরফে হৃদয়কে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি ও ৩টি ম্যাগজিনসহ গ্রেফতার করা হয়। বাবুর তথ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি দক্ষিণ গোড়ান হতে উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, এই মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছে থেকে নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল, দুটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে এই মোটরসাইকেল ও অস্ত্র হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা প্রথমেই মূল শুট্যার আকাশকে গ্রেফতার করেছি। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একে একে অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় আগে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আজকে পাঁচজনসহ মোট ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মোল্লা শামীম বেনাপোল হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৫ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, সে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করেছি।
হত্যার নির্দেশদাতা জিসান ও মানিক, পরিকল্পনায় মুসা
হত্যার নির্দেশদাতা ছিল বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মানিক। আর হত্যা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা করেন দুমজ সিকদার মুসা ওরফে শুট্যার মুসা।
ডিবি প্রধান বলেন বলেন, বোচা বাবু হত্যার পর টিপুর সঙ্গে মুসার একটা দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই মূসা এই হত্যাকাণ্ড ঘটনার পরিকল্পনা করে। নিজে পরিকল্পনা করে শামীমকে দায়িত্ব দেয়। আমরা মুসাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় এরই মধ্যে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি। তার উদ্দেশ্য ছিল টিপুকে দুনিয়ে থেকে সরিয়ে দেওয়া। জিসান ও মানিক বিদেশ বসে এই হত্যার সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়েছে। তারা মূলত জানান দিতে চেয়েছে যে তারা এখনও রয়েছে।
হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি। উদ্ধার অস্ত্র টিপু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আকাশ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, যে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেটিই আমরা উদ্ধার করেছি। আমরা দ্রুত এই হত্যার ঘটনায় জিসান ও মানিককে দেশে ফিরিয়ে আনবো।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিএমপির ডিবির মতিঝিল বিভাগ মামলাটি তদন্ত করছে। গত ২৪ মার্চ রাত ১০টা ২০ মিনিটে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু এজিবি কলোনী থেকে নিজ বাসায় ফেরত যাওয়ার পথে গুলি করা হয়।
এ সময় পাশে থাকা রিকশারোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।
গোয়েন্দা (মতিঝিল) বিভাগ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে এ মামলার মূল ওটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের মূল সমন্বয়ক হিসাবে সুমন শিকদার অরফে মুসা ও পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহম্মেদ মন্টি ও জাফর আহম্মেদ মানিক অরফে ফ্রিডম মানিকের সংশ্লিষ্টতার কথা প্রকাশ করে।
পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের মাধ্যমে সুমন শিকদার মুসাকে ইন্টারপোলের সহায়তায় ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
ডিবি প্রধান জানান, এক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি শামীম হোসেন অরফে মোল্লা শামীম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে যশোর বেনাপোল এলাকায় অবস্থান করছে। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় তাকে যশোর বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করে।
মোল্লা শামীমের দেওয়া তথ্যে তৌফিক হাসান অরফে বাবু অরফে বিডি বাবু, মো. সুমন হোসেন ওরফে সুমন ও মো. এহেতেশাম উদ্দিন চৌধুরী ওরফে অপুকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জেএন/কেকে