আপাতত অসন্তোষ নিরসন

অবশেষে চট্টগ্রাম কলেজে গঠিত ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কলেজে এই কমিটির নেতা-কর্মীদের সকল ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে তারা। টানা সংঘর্ষ, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, মিছিলসহ নানা অস্থিরতার এক মাস পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

- Advertisement -

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ সিদ্ধান্ত সে অসন্তোষকে ‘আপাতত’ নিরসন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

- Advertisement -google news follower

চট্টগ্রাম কলেজের নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বেলাল বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে কোন ধরনের পরামর্শ ছাড়াই চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। আমরা এ কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের দাবির বিষয়টি উপলব্ধি করে কলেজে এ কমিটির উদ্যোগে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রতি সুনজর দিয়ে কেন্দ্রীয় সংগঠনের এমন উদ্যোগ সংগঠনকে গতিশীল করবে।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মোস্তফা কামাল বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের অভিভাবক। তদন্তের পর কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দিবে তা আমরা অবশ্যই মেনে নেব।

- Advertisement -islamibank

কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর জয়নিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি একটি সিদ্ধান্ত দিলে এটি না মানার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে চট্টগ্রাম কলেজে মিছিল-সমাবেশ স্থগিত থাকবে।

জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির নিরিখে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে সব ধরনের সভা-সমাবেশ না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল। উক্ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তদন্তে সৃজন ভূঁইয়া ও আসিফ ইকবাল অনীকের সমন্বয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হল।

আপাতত অসন্তোষ নিরসন

এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। এ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে পরদিন থেকে শুরু হয় উত্তেজনা। ওই রাত থেকেই এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে কলেজের মূল ফটকে অবস্থান নেয় পদবঞ্চিতরা। ১৮ সেপ্টেম্বর সকালেই কমিটির ছয় সদস্য পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগকারীরা হলেন কমিটির সহ-সভাপতি মো. ওবায়েদুল হক, মোস্তাফা কামাল, মোক্তার হোসেন রাজু, শাজাহান সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বেলাল ও আনন্দ মজুমদার।

ঘোষিত কমিটিতে অছাত্র, শিবির ও বহিরাগতদের পদ পাওয়ার অভিযোগ তুলে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন তারা। ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে সংঘর্ষের শুরু। এ সংঘর্ষ-উত্তেজনা চলতে থাকে টানা ১৭ দিন। দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে আহত হয় ২০-৩০ জন নেতা-কর্মী। আহত হয় পুলিশও। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হতেও দেখা যায় এসব সংঘর্ষে।

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম কলেজের কমিটি গঠন করার দিন ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের সভাকক্ষে এক বৈঠকে অবসান হয় নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের দূরত্ব। আর ওই রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাউকে না জানিয়ে ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম কলেজের মত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের কমিটি।

তাদের বক্তব্য ছিল, যে দিনে নগর আওয়ামী লীগ একসঙ্গে আসন্ন নির্বাচন ও নগরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার বিষয়ে একমত হন, সেই রাতেই আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশ কাটিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের মত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমিটি ঘোষণার উদ্দেশ্য হল দলের ঐক্য বিনষ্ট করা। পদবঞ্চিতরা আরো অভিযোগ তোলেন, এ কমিটিতে যেমন ঠাঁই হয়েছে শিবির কর্মীর, তেমনি ঠাঁই হয়েছে অছাত্রদের।

এদিকে চট্টগ্রাম কলেজ কমিটি নিয়ে বিতর্কে জড়ানোর পর নগর কমিটি নিয়েও সমালোচনায় জড়ায় নগর ছাত্রলীগ। কারণ নগরের দুই বছরের কমিটি পার করছে ছয় বছর। ৪১ ওয়ার্ডের হাতেগোনা কয়েকটিতে কমিটি দিয়ে দায় সেরেছেন তারা! ২৯১ জনের কমিটির প্রায় ২০০ জনই বিয়ে করে এখন সংসারী। গঠন করতে পারেননি কোন থানা কমিটিও। নগর ছাত্রলীগের ঐতিহ্যবাহী ‘ঘাটি’এমইএস কলেজ, সিটি কলেজ, ইসলামিয়া কলেজের কোন নেতা-কর্মীকে তারা দিতে পারেননি ‘সাংগঠনিক পরিচয়’! এমনকি যে প্রতিষ্ঠানে নিজেদের রাজনীতির হাতেখড়ি সে প্রতিষ্ঠানেই কমিটি দিতে পারেননি তারা!

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১৫ বছর ধরে সিটি কলেজ, এমইএস কলেজে কমিটি নেই। যতই শক্ত অবস্থান থাকুক, ওই কলেজগুলোতে কমিটি না দেওয়া কি সাংগঠনিক ব্যর্থতা নয়। হাজারো নেতা-কর্মীর কি রাজনৈতিক পরিচয়ের দরকার নেই?

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের উপ দফতর সম্পাদক সনেট চক্রবর্তী জয়নিউজকে বলেন, ২৯১ জনের নগর কমিটির ২০০ জনই বিয়ে করেছে। তাদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী। সংগঠন গোছানোর কাজে তাদের কেউ নেই।

তবে কমিটি করতে না পারলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন-ফিসহ বিভিন্ন অযুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার প্রতিবাদে আন্দোলন সংগ্রামে দেখা গেছে ইমু-রনি-দস্তগীরের ছাত্রলীগকে। এ বিষয়গুলোকে সংগঠনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের পরিচায়ক বলে মনে করেন অনেকে। কিন্ত সাংগঠনিক ভিত্তি অর্জনে এ কমিটির সফলতা দৃশ্যমান নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্রলীগের এ কমিটি চট্টগ্রামজুড়ে ছাত্রলীগের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ফেরাতে পারলেও, ইউনিটগুলোতে কমিটি গঠন না করায় সংগঠনে ছাত্রদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন তারা।

 

জয়নিউজ/এফও/জুলফিকার

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM