ফলের মধ্যে আম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। এদিকে আমের মৌসুম শেষ। ফলে এখন বাজারে আম্রপালী ও হাড়িভাঙ্গাসহ সুমিষ্ট জাতের আম বাজারে নেই বললেই চলে।
তবে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাটবাজারে ভারতীয় চোষা আমের দেখা মিলছে। এনিয়ে ক্ষোভও রয়েছে দেশীয় আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের।
তবে হাটবাজারে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে আশ্বিনা জাতের আম। ভ্যান থেকে শুরু করে ফলের দোকান কিংবা আড়ত, সব খানেই এখন পাওয়া যাচ্ছে এ আম। এখনো বিভিন্ন জেলার বাগানে থোকায় থোকায় গাছে ঝুলছে আশ্বিনা আম।
অথচ কয়েক বছর আগেও এই আম নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না ক্রেতাদের। আমের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আমবাজারের ব্যবসায়ীরা।
তবে চলতি বছর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার আর চাষের কলাকৌশলে পরিবর্তনে এ আমের ফলনও হয়েছে বেশি। তাছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা জাতের আমের স্বাদেও পরিবর্তন এসেছে। ফলে বেচাকেনাও হচ্ছে বেশ ভালো।
পছন্দের শীর্ষে থাকায় বাজার ভরেছে আশ্বিনা আমে। ব্যবসায়ীরাও চাহিদা মতো দাম পেয়ে খুশি।
সাধারণত চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মৌসুম শেষ হয় আগস্ট মাসের শুরুর দিকে। এবার আশ্বিনা আমের যত্ন নেয়ায় বাজারে আম পাওয়া যাবে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, আগে এই আম স্বাদে টক ছিল। এখন খেতে বেশ মিষ্টি লাগে। এ কারণে আগে তেমন চাহিদা না থাকলেও এখন মৌসুমের শেষ দিকে এসে এই আমের দাম ও চাহিদা বেড়ে গেছে।
বাগান মালিকরা জানান, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি আর চাষের কৌশলগত উন্নয়নে দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ার পাশাপাশি টক স্বাদের আশ্বিনা আমে এসেছে মিষ্টভাব। রঙটাও বেশ। ফলে আমস্বত্ত্ব, আচার তৈরির বদলে সরাসরি খাওয়ার উপযুক্ত হওয়ায় বেড়েছে এ আমের চাহিদা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কানসাট বাজারে আম বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা গেল বছর আশ্বিনা আম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা মণ দরে।
মৌসুম শুরুর মত এখনও পুরো বাজারে রয়েছে আম ভর্তি সাইকেল ও ভ্যানে ভরা। ব্যবসায়ীদের কেনা বেচায় মুখর পুরো বাজার।
সেলিমাবাদ এলাকা হতে ভ্যানে করে (৬ মণ) আম বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছিলেন কাশেম মিয়া। তিনি বলেন, আগে এ জেলার মানুষ আশ্বিনা আমের দাম না পাওয়ায় আমের তেমন যত্ন নেয়া হয়নি।
তাছাড়া আশ্বিনা আম টক হওয়ায় আচার অথবা জুসের জন্য বিক্রি করে দিতো আম চাষিরা। এখন বেশি বেশি পরিচর্যা করছেন চাষিরা। আগে বৃষ্টি বাদলের কারণে বেশি পরিমাণে আম নষ্ট হতো, এখন আশ্বিনা আমে ফ্রুড ব্যাগিং করায় কম নষ্ট হচ্ছে। আর বাজারে এ আমের চাহিদা বেড়েছে।
আজিজুল হক নামে এক আম বাগানি জানালেন, এবার আমের ভাল দামের আসায় প্যাকেট করা হয়। তাদের বাগানের আম আরও প্রায় ১৫ দিন বাগানেই রাখা যাবে। সময় যতই পার হবে আমের দাম ততই বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণের তথ্য মতে, জেলায় ২৪ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৫ গাছে আশ্বিনা আমের চাষাবাদ করছেন চাষিরা।
জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে এ আমের চাষাবাদ হচ্ছে। এখানে ৫ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ গাছে আশ্বিনা আবাদ হচ্ছে।
ব্যাগিং করার কারণে এই আমের যে টকভাব ছিল তা একটু কম হচ্ছে উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, আশ্বিনা আম উৎপাদনের কৌশল আরও উন্নত করার সঙ্গে সঙ্গে বাগান মালিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
তবে বেশ কয়েকজন আম বাগানি অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে ভারতীয় চোষা আমে। ভারতীয় আমের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় কমে এসেছে দেশীয় আমের মূল্য।
যদি ভারতীয় আম আমদানি না হত-তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতি মণ আশ্বিনা আম বিক্রি হত ১০ হাজার টাকায়। তারা আমের মৌসুমে ভারতীয় আম আমদানি বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বলেও জানান।
জেএন/পিআর