সদ্য বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সর্বশেষ রিপোর্টে মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি। যেসব দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার এবং মানবিক অধিকার নিয়ে সমস্যা ও উদ্বেগ রয়েছে, সেটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেলের সর্বশেষ রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। ওই রিপোর্টে উল্লিখিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম দেখা যায়নি।
আগামী ৩১ আগস্ট মিশেলের জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এ উপলক্ষে গত ২৫ আগস্ট জেনেভায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের দৃষ্টিতে নিজের মেয়াদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট ব্যাচেলেট।
মিশেল উল্লেখ করেন, তার এই মেয়াদকালে বিশ্বের মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। বৈশ্বিক কোভিড মহামারির অপরিসীম নেতিবাচক প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে তীব্র খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট- এই তিনটি বিষয়ই হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের প্রধান ইস্যু।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মিশেলের রিপোর্টে রিপাবলিক অব কঙ্গোর যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের কথা উল্লেখ করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ মাইনিংয়ের কারণে বিভিন্ন ঝুঁকিতে থাকা পেরুর আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলা হয়। আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে বাস্তুচ্যুত মানুষদের অসহায়ত্বের কথাও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ভেনিজুয়েলায় ২০১৭ সালে প্রতিবাদ সমাবেশে এক তরুণের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি বসনিয়ায় ২৭ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক তরুণের কথাও উঠে আসে।
তিনি উল্লেখ করেন, মৃত্যুদণ্ড বাতিলের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। ১৭০টি রাষ্ট্র তাদের আইনে বা অনুশীলনে স্থগিতাদেশ বাতিল করেছে বা পাল্টে ফেলেছে, অথবা ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করেছে। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চাঁদ, কাজাখস্তান, সিয়েরা লিওন এবং পাপুয়া নিউগিনি মৃত্যুদণ্ড পুরোপুরি বাতিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি প্রায় ভুলতে বসা ইয়েমেন, সিরিয়া, আফ্রিকার সাহেল এলাকা এবং হাইতিতে মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টের বড় অংশজুড়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মানবিক বিপর্যয়ের ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১১ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। রিপোর্টে মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশটির জান্তা সরকারকে দায়ী করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
রিপোর্টে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সে কথাও উল্লেখ করা হয়। ইউক্রেনে আক্রমণ বন্ধের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে উভয় পক্ষকেই সবসময় এবং সব পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সম্মান করার অনুরোধ জানানো হয়।
সব শেষে তিনি ধন্যবাদ জানান সাংবাদিকদের, যারা জেনেভা এবং সারা বিশ্বে তাদের অপরিহার্য কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ জাতিসংঘ যখন কোনো বিষয়ে আওয়াজ তুলে তা সাংবাদিকরা বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেন।
জেএন/কেকে