বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম আয়োজিত নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়তে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব ও করণীয় শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, পাহাড় নদী সাগর রক্ষা করে পরিবর্ধনশীল চট্টগ্রাম মহানগরী গড়ার পরিকল্পনা আজকে থেকে বাস্তবায়ন কাজ শুরু না করলে আগামী দশ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে ১৫ লক্ষ মানুষের শহরে কোটি মানুষ বাসবাস করছে। এখন পরিকল্পিত পরিবর্ধনশীল আধুনিক মহানগরী গড়তে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সঠিক পরিকল্পনা রাজনৈতিক প্রশাসনিক সদিচ্ছাই পারে আধুনিক নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়তে।
আজ রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, পরিবেশ বান্ধব নান্দনিক চট্টগ্রাম মহানগর গড়তে সব ধররেন ঝঁুকি মোকাবেলা করতে আমি দ্বিধা করবো না। যে পাহাড় কাটবে তাকেই জেলে ভরতে হবে। খাল-নালা, ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আগামীতে নিয়মিত তা অব্যাহত থাকবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, এখন থেকে পরিকল্পিত পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পনা গ্রহন করে তার সঠিক বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী দশ বছরে চট্টগ্রাম মহানগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। তিনি চট্টগ্রাম শহরকে আধুনিক পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক করে তার উভয় পাশে আধুনিক নগর গড়ে তোলার কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়ে তোলা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন অবশ্যম্ভাবী।
উক্ত সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুমিনুর রহমান বলেন, পাহাড় নদী খাল দখলকারী মসজিদের ঈমাম বা পুরোহিত যেই হোকনা কেন তাদের নীতিগত দূর্বলতা থাকবে। দূর্বত্তদের বিরুদ্ধে সঠিক আইনের প্রয়োগ করা হলে তারা পালাবেই।
তিনি বলেন, জঙ্গল সলিমপুর থেকে পাহাড়খেকোকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে আমাকে বদলির হুমকি দেয়া হয়েছে। আমি তাদের সাধুবান জানিয়ে বলেছি-আমি যেখানেই চাকরি করি আমার বেতন অন্যান্য সুযোগ সুবিধাতো কম হবে না। আমরা যারা সরকারি চাকরি করে দূর্বত্ত খারাপ লোকদের ভয় না পেলে অনেক কাজ করতে পারবো। আমাদের পাহাড় অভিযানকে সর্বস্তরের জনগন সমর্থন দিয়েছে। যারা পাহাড় খায়, বালি খায় সরকারি গাছ খায় তারা কখন ভাল মানুষ নয়। তাদের বিতাড়িত করা সহজ।
সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, একজন আইনজীবি, একজন মেয়র একজন জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের পরিরেশ রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রত্যেক নাগরিক নিজ জায়গা থেকে সচেতন থেকে সামাজিক আন্দোলন করলে পরিবেশ বান্ধব চট্টগ্রাম মহানগরী গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন,চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা অন্যায়ের প্রতিবাদ কলম দিয়ে করার সাহস রাখে। যে কারণে আমরা হাইকোর্টে মামলা করতে পেরেছি। আজকে এই অনুষ্ঠান সীমাহীন প্রেরণা যুগিয়েছে। যা আগামীতে চট্টগ্রামের পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় আমি আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবো।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক মফিদুল আলম বলেছেন, জনগণ সচেতন হলে আমাদের কাজ করাটা সহজ হয়। আমাদের অনেক সীমাবন্ধতা সত্ত্বেও পাহাড়, খাল নদী রক্ষায় প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদের সভাপতিত্বে দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন, চুয়েট ভিসি (প্রাক্তন) ও ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম ও সিনিয়র সাংবাদিক আলীউর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিডিএ বোর্ড মেম্বার স্থপতি আশিক ইমরান। বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম চট্টগ্রাম চেপ্টারের সভাপতি প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব।
সংগঠনের পরিচিতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক কামাল পারভেজ, যুব পরিবেশ সংগঠন জোট বে এর সভাপতি,ইঞ্জিনিয়ার বিজয় চক্রবর্তী, পরিবেশ ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম পেয়ার আলী প্রমুখ।
জেএন/এফও/কেকে