দুই বছর পর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফিরছে সাদা বলে রঙিন পোশাকের ক্রিকেট। তাই তো চট্টগ্রামের ক্রিকেটপ্রেমী জনতার গন্তব্য এখন সাগরপাড়ের ক্রিকেট মাঠে। প্রতিপক্ষ যেই হোক, মাঠে খেলবেন মাশরাফি-মুশফিক-মুস্তাফিজরা। তাদের খেলা দেখার সঙ্গে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ চিৎকার করার এই সুযোগ আর পাবে কবে!
চারপাশ ঘুরে মনে হবে, যেন উৎসব ফিরেছে জহুর আহমেদে। এই উৎসবের উপলক্ষ জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দিবারাত্রির দ্বিতীয় ম্যাচ। যেটি শুরু হচ্ছে আজ বুধবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায়।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর ইংল্যান্ডের সঙ্গে এই মাঠে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ২৭৭ রান করেও সেই ম্যাচে ১৩ বল আগে ৪ উইকেটে হারতে হয়েছিল টাইগারদের। যদিও এতে শিশিরের প্রভাব ছিল ব্যাপক। আজকের দিবা-রাত্রির ম্যাচেও বড় ফ্যাক্টর হবে শিশির।
সময়ের বিবেচনায় বাংলাদেশ দল এখন অনেক এগিয়ে। তাই আজকের ম্যাচ জিতেই সিরিজ নিজেদের করে নিতে মরিয়া টাইগাররা। এই দুই বছরে বাংলাদেশ যতটা এগিয়েছে ঠিক ততটাই পিছিয়েছে জিম্বাবুয়ে। চট্টগ্রামের এই মাঠেই ৬ খেলায় জিম্বাবুয়ে হার মেনেছে ৫টিতে। বাকি ম্যাচটি হয়েছিল পরিত্যক্ত। সবমিলিয়ে এই মাঠে ১৯ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় ১০টি। এই মাঠকে টাইগারদের ‘লাকি’ ভেন্যু হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
ম্যাচ দুপুর আড়াইটায় হলেও সকাল থেকেই স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে উৎসব। টিকিটের জন্য হাহাকার আর দীর্ঘলাইনে দাঁড়ানোর কষ্টটুকু বাদ দিলে সত্যিই মনে হবে ক্রিকেটই যেন এই জাতির আনন্দের অন্যতম উপলক্ষ। এমনও ক্রিকেটপ্রেমী এখানে রয়েছে যিনি ১০০ টাকার টিকিট কিনেছেন পাঁচ গুণ বেশি দামে!
দাম বাড়তি হলেও টিকিট পেয়েই উচ্ছ্বসিত ক্রিকেটপাগল তরুণরা। টিকিট পাওয়ার পর তাদের পরবর্তী লক্ষ্য, বড় মাপের একটা লাল-সবুজের পতাকা। কত বড় পতাকা কিনবে তাই নিয়ে গবেষণা করছেন চার তরুণের একটি দল। বিক্রেতা বড় সাইজের একটি পতাকার দাম হাঁকালেন দেড়শ’ টাকা। শেষপর্যন্ত ১৩০ টাকায় সেই পতাকা কিনে নিলেন তরুণদের সেই দল।
সমর্থকদের কেউ কিনছেন বাংলাদেশের জার্সি, আর কেউ নিচ্ছেন পতাকা সংবলিত রিস্ট ব্যান্ড, মাথার টুপি কিংবা ছোট পতাকা। আর সেগুলোই গায়ে, বুকে, মাথায়, কপালে ও হাতের কব্জিতে ধারণ করে টাইগারভক্তরা ছুটছেন গ্যালারিতে।
রঙ-তুলির ছোঁয়ায় হাতে-গালে পতকা আঁকিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুব্রত বেশ মনযোগ দিয়ে এই কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি অঙ্কনের জন্য তিনি নিচ্ছেন ২০ টাকা।
মাঠে খেলা দেখতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও আঁচ করা গেল দুই বছর পর ওয়ানডে ম্যাচ দেখতে কতটা মুখিয়ে আছেন তারা। এসময় সুমন নামে এক ক্রিকেটভক্ত জয়নিউজকে বলেন, অনেক দিন পর এই মাঠে ওয়ানডে হচ্ছে। মাশরাফি ভাই শুধু ওয়ানডে খেলেন। তাঁকে দেখতেই মাঠে আসলাম।
স্টেডিয়াম চত্বর ঘুরে আনন্দের এমন অনেক পসরাই চোখে পড়ল। এখন শুধু এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশ জিতলে এই আনন্দ দ্বিগুণ হবে। ২০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই মাঠে সেই প্রত্যাশায় গ্যালারিতে আছেন বাংলাদেশ সমর্থকরা। তাদের সঙ্গে টিভির পর্দায় আছে আরো লক্ষ-কোটি চোখ। তারাও মনে-প্রাণে চাইছেন, আজই নিশ্চিত হোক টাইগারদের সিরিজ জয়।