নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ আগুন জ্বলছে ইরানে। বিক্ষোভে নারীদের পাশাপাশি ইরানি পুরুষও যোগ দিয়েছেন। ‘সঠিক নিয়মে’হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ২২ বছরের মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় এ বিক্ষোভের সূত্রপাত। তেহরানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। রাজধানী তেহরানে আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয় ও তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন।
জানা যায়, কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। ইরানের বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষও চলছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী বাহিনীর (আইআরজিসি) আধাসামরিক বাহিনী বাসিজের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
প্রাগভিত্তিক রেডিও ফারদা জানিয়েছে, কুর্দি অধ্যুষিত দিভান্দারেহেতে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়লে আহত হন ৮ জন।
মাহসাকে দাফনের সময়ও বিক্ষোভকারী গভর্নর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তেহরানের পুলিশ কমান্ডার হোসেন রাহিমি বলেন, আমিনিকে নৈতিকতা পুলিশ বাধা দিয়েছে, কারণ তার হিজাব অনুপযুক্ত ছিল। সংবাদ সম্মেলনে আমিনিকে পুলিশের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন হোসেন রাহিমি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাহসা আমিনির মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া দেশটির নৈতিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্নেল আহমেদ মিরজাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জয়নিউজ/পিডি