চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে হট্টগোল বাধিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল বিএনপি নেতা-কর্মীরা। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে কারাগারে নেওয়ার পথে বাধা দেয় তারা। বাধা ডিঙাতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসময় আদালতের কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে বিএনপির দেড়শ’নেতা-কর্মীকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করে।
এ মামলা দায়ের করে অন্যান্য সময়ের মতো বসে থাকেনি পুলিশ। পরদিনই গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে। নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাতসহ এ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে থানা পুলিশের পাশাপাশি তৎপর গোয়েন্দা পুলিশও।
বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বক্করসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। মামলা রয়েছে শতাধিক। এসব মামলার কোনটি অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে, কোনটি নাশকতা কিংবা হামলার ঘটনায়। কিন্তু পুলিশ অনেকটা নমনীয় হয়েই তাদের এতদিন গ্রেফতার থেকে বিরত ছিল। মিছিল-সমাবেশে নিয়মিত অংশ নিচ্ছিলেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ কিংবা দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন- এমন অসংখ্য কর্মসূচি পালন করেছে তারা পুলিশি বাধা ছাড়াই।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে ২১ অক্টোবর। হঠাৎ আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেদিন থেকে পুলিশও আদাজল খেয়ে নামে বিভিন্ন মামলার আসামি বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডজন ডজন মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে এতদিন সভা-সমাবেশ চালিয়ে আসছিলেন নগর বিএনপি নেতা-কর্মীরা। পুলিশ সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে সমাবেশ কিংবা কোনো কর্মসূচি থেকে তাদের গ্রেফতার করেনি। কিন্তু পুলিশকে ক্ষেপালেতো সমস্যা। বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশের বসে থাকার উপায় নেই। এক্ষেত্রে কঠোর না হলে বাহিনীর সদস্যদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ওপর হামলার পর থেকেই বিভিন্ন মামলার আসামি বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে- এ বক্তব্য মানতে নারাজ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জয়নিউজকে বলেন, ২১ অক্টোবর আদালতে পুলিশের ওপর হামলার পর পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে- এমন তথ্য সঠিক নয়। বিভিন্ন সমাবেশ থেকে আসামি গ্রেফতার করা কিছুটা জটিল। সমাবেশে বক্তব্য রাখলেও নাশকতার আসামিরা গা ঢাকা দিয়েই চলাফেরা করতেন।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন নাশকতা ও অস্ত্র মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। কারণ নির্বাচনের আগে তারা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির ছক আঁকছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
এদিকে নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান অভিযোগ করে জয়নিউজকে বলেন, আদালতে ২১ অক্টোবরের ঘটনাটি সাজানো। এই মামলাটি দায়ের করে সরকার মূলত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশকে বানচালের চেষ্টা করছে। এছাড়া অতীতে দায়ের করা অসংখ্য মামলায় আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ।
নগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নগরের ১৬ থানায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১২৫টি মামলা দায়ের হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র আইনে এসব মামলা দায়ের করে পুলিশ। ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চার বছরে দায়ের হয় ১২৭টি মামলা। এসব মামলার কোনটিরই বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি। সব আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়নি। তবে বেশিরভাগ মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।
জয়নিউজ/জুলফিকার