পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিচয় মিলেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৬৩ জনের বেশি। ডুবে যাওয়া নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের মতো যাত্রী তোলা হয়েছিল। মূলত ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দুর্ঘটনায় মৃত ২৫ জনের মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও পাঁচ পুরুষ রয়েছেন। তাদের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা, দেবীগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলায়।
রাতে কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত নৌকাডুবির ঘটনায় ৬৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খোঁজে নদীতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এখন পর্যন্ত তিনটি ইউনিট উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করছে বলে জানায় কন্ট্রোল রুম।
এছাড়া কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যমতে, দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পলি রানি (১৪), লক্ষ্মী রানি (২৫), শোভা রানি (২৭), প্রিয়ান্তা রানি (৫), খুকি রানি (৩৫), প্রলিমা রানি (৫৫), তারা রানি (২৪), শোনেকা রানি (৬০), ফাল্গুনি রানি (৫৫), প্রমিলা রানি (৭০), ধনবালা (৪৭), সুমিত্রা রানি (৫৭), সফলতা রানি (৪০), শিমলা রানি (৩৫), উশোষী রানি (২), তনুশ্রী রানি (২), শ্রেয়শী রানি (২), শ্যামলি রানি (৩৫), রূপালী রানি (৩৫), দীপঙ্কর (৫), অমল চন্দ্র (৩৫), বিমল চন্দ্র (৪৫), জ্যোতিষ চন্দ্র (৫৫) এবং নৌকার মাঝি হাসান আলী (৫২) ও ভোজেন (২৪)।
এদিকে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর রায়কে প্রধান করে কমিটি গঠন হয়।
এদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
মাড়েয়া বামনহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ৮০ জনের বেশি যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপর পাড়ে) যাচ্ছিলেন। তবে মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন। ঘটনাস্থলেই ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল।দুর্ঘটনাকবলিত নৌকার যাত্রী ধারণের ক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও ধনেশ চন্দ্র জানান, সকাল থেকে ঘাটে মানুষের ভিড় ছিল। ছোট ছোট নৌকাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় ৮০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ নারী-শিশু পানিতে ডুবে যান। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করেন। পরে জেলা, উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
জেএন/এফও/এও