চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আর কয়েক দিন পরেই হিন্দু ধর্মের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে ঘিরে উন্নয়ন বিরোধী একটি মহল দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। গত বছর দুর্গাপূজা চলাকালীন কুমিল্লায় ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা অপপ্রচার চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে যারা চেষ্টা করবে তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। এদেশের জনগনকে সাথে নিয়ে দেশ বিরোধী কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এ দেশে কোন অপশক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সকল অপশক্তির পরিকল্পনা রুখে দিয়ে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সহিংসতামুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর ষোলশহরস্থ এলজিইডি মিলনায়তনে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ধর্মীয় এবং সামাজিক বন্ধনকে এগিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শুরুতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে শপথবাক্য পাঠ করান জেলা প্রশাসক। সমাবেশ শেষে সামাজিক সম্প্রীতি র্যালি বের করা হয়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের লাইফ লাইন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। এ জেলার ছোট্ট একটি ঘটনা বাংলাদেশের যে কোন জেলার জন্য একটি বড় ঘটনা। তাই যে কোন মুল্যে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা হবে। এলাকায় কারা সন্ত্রাসী, জঙ্গি, উগ্রবাদী কিংবা অপকর্মের হোতা তাদেরকে নজরে রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে গুরুত্বপূণূ ভূমিকা পালন করতে হবে। আইন-শৃংখলার অবনতি ঘটতে পারে এমন তথ্য পেলে তাৎক্ষনিক জানাতে হবে। কোন অশুভ শক্তির কাছে বীর বাঙ্গালী কখনো মাথানত করবেনা। অশুভ শক্তির বিষদাঁত ভেঙ্গে ফেলা হবে।
সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম শফিউল্লাহ বলেন, সামাজিক সম্প্রীতি ছাড়া উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মহান স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোড মডেল। দেশের সাপ্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও দৃশ্যমান উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী উঠেপড়ে লেগেছে। শুধু দুর্গাপূজা নয়, কোন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া যাবেনা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত করতে পেরেছি বলেই আমরা আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় কোন বিশৃংখল পরিবেশ থাকবেনা। দুর্গোৎসব বা পুজামন্ডপ ঘিরে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করলে কিংবা উস্কানী দিলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবেনা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ বদিউল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস.এম শফিউল্লাহ, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল দুলু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সার্ধাণ সম্পাদক মোঃ মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিনহাজুর রহমান, পটিয়া পৌর মেয়র মোঃ আইয়ুব বাবুল, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেখা আলম চৌধুরী, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কামাল উদ্দিন, জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টের ট্রাস্টি মিথুন রশ্মি বড়ুয়া, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আনোয়ারুল আজহারী, লোহাগাড়ার বড় হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়া প্রমূখ।
সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশে বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সরকারী কর্মকর্তা, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, পৌর মেয়র, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান, গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
জেএন/এও