বীর চট্টলায় বীরের বেশে এসেছেন ওরা পাঁচজন। ছাদখোলা জিপে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে এসেছেন তারা। সাফজয়ী বৃহত্তর চট্টগ্রামের ফুটবলারদেরকে সংবর্ধনা দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর জামালখান চত্বরে সাফজয়ী পাঁচ ফুটবলার রাঙ্গামাটির রূপনা চাকমা ও রিতুপর্ণা চাকমা, খাগড়াছড়ির মণিকা চাকমা এবং যমজ দুই বোন আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
‘আঁরার মাইয়া, আঁরার গর্ব’ স্লোগানে বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেছুর রহমান, চিটাগাং উইম্যান চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট লায়ন কামরুন মালেক, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক, বিসিবি পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু, অনুষ্ঠানের স্পন্সর ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নিশাত ইমরান, স্থানীয় জামাল খান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন প্রমুখ। শারীরিক অসুস্থতায় সশরীরে উপস্থিত হতে না পেরে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান।
সংবর্ধনায় পাঁচ নারী ফুটবলারের প্রত্যেককে দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। মুন্নু সিরামিকসের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ডিনার সেট। অনুষ্ঠানের শুরুতে পাঁচ ফুটবলারকে ফুলের মালা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কেট কাটা হয়।
এর আগে বেলা ১১টায় পাঁচ ফুটবলার ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রাম আসেন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর চট্টগ্রাম ক্লাবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় মোটর শোভাযাত্রাযোগে চট্টগ্রাম ক্লাব থেকে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় সাফজয়ী পাঁচ ফুটবলারকে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, আমি বৃহত্তর চট্টগ্রামের মেয়ে। আমি গর্বিত চট্টগ্রামের মেয়ে হয়ে। যখন দূরে থাকি তখন চট্টগ্রামকে মিস করি। অনেকদিন পরে চট্টগ্রামে শহরে এসে অনেক ভালো লাগছে। অনেক খুশি লাগছে আজকে। আমাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশে ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, এতোদিন যেভাবে আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও এভাবে পাশে থাকবেন বলে প্রত্যাশা করি। আমারা যেন বাংলাদেশকে আরও ভালো সাফল্য এনে দিতে পারি সেই দোয়া করবেন। আপনাদের সীমাহান সমর্থন আমাদের পথচলা আরো দৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানে একুশে পদক বিজয়ী দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ‘এই নারীরাই আমাদের গর্ব, অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তারা আমাদের জন্য সম্মান ছিনিয়ে এনেছেন। ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ফুটবলারদের জন্য মা ও শিশু হাসপাতালে আজীবন ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সাফ ফুটবলে বাংলার নারী ফুটবলাররা যে সম্মান বয়ে এনেছেন, তা ধরে রাখতে হবে। আশিয়ান ফুটবলেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তাহলে এশিয়া মানের ফুটবলের কৃতিত্ব অর্জন করা সম্ভব হবে। এই ফুটবলাররা দেশের সম্মান, এদের বিপদগামী হতে দেওয়া যাবে না। তারা নিজেদের ধরে রাখলে, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে আগামীতে এই নারীরাই এশিয়াতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে।’
বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন বলেন, দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে পাঁচ নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। এটা গৌরবের। এই নারীরাই শুধু চট্টগ্রাম নয় সারাদেশের জন্যে গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছেন।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, আজ চট্টগ্রামে পাঁচ নারী ফুটবলার শুধু নয়, আমরাও এই জয়ের অংশীদার, গৌরবের অংশীদার। কারণ আমার পরিবারেও ফুটবলের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
ওয়েল গ্রুপ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, পাঁচ নারী ফুটবলার আমাদের অহংকার, আমাদের গর্বের। দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামের সব ভালো কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আজ সাফজয়ী পাঁচ নারী ফুটবলারকেও সংবর্ধনার আায়োজন করেছে আজাদী। দৈনিক আজাদী অতীতেও চট্টগ্রামের ভালো কাজের সঙ্গে ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
জেএন/এও