শিঘ্রই বাজারে আসছে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নতুন কবিতার বই ‘স্বপ্নগুলো জেগে থাকে’। সূচিপত্র প্রকাশনী কবিতার এই নতুন বইটি বাংলা ভাষার সাহিত্য ও কবিতা প্রেমীদের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে।
প্রবীণ বয়সের তরুণ কবি আলী রীয়াজ। তাঁর কবিতা লেখার শুরু সত্তর দশকে হলেও বই বেরিয়েছে ২০১৭ সালে। সিরিয়াস গবেষণাধর্মী লেখালেখির অবসরে কখনো সমালোচনা, কখনো শ্লেষ, কখনো বিদ্রোহীর ভূমিকায়, কখনো আবার বিনয়ী বাঙালি হয়ে প্রবাস-যন্ত্রণায় দূর দ্রাঘিমার এই কবি না বলা কথাগুলো বলতে চান তাঁর কবিতার স্বরে। বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) রাত পৌনে নয়টার দিকে অধ্যাপক রীয়াজ তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের একটি পোস্টে লিখেন, ‘আমার কিছু কবিতা দুই মলাটে বন্দী হয়ে প্রকাশিত হবে সূচিপত্র প্রকাশনী থেকে’। এতে তিনি বইটির সম্ভাব্য প্রচ্ছদও উন্মুক্ত করেন তাঁর ফেসবুক বন্ধুদের জন্য।
প্রকাশক সাঈদ বারী জয়নিউজকে জানান, আগামী নভেম্বরে প্রকাশিত হবে ‘স্বপ্নগুলো জেগে থাকে’। বইটির প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করেছেন শিল্পী নাসিম আহমেদ। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে আড়াই শ’ টাকা। বইটি আগামী একুশে বইমেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘সূচীপত্র’র স্টল ছাড়াও দেশের অভিজাত বই বিপণীগুলোতে পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, আসছে নভেম্বরেই সূচীপত্র তার প্রকাশনার ৩০ বছরে পদার্পণ করছে।
‘আমি নেই আমার না-থাকা আছে’ আলী রীয়াজের প্রথম কাব্য গ্রন্থ। আলী রীয়াজ কবিতা লেখা শুরু করেন সত্তরের দশকের মাঝামাঝি, তখন ডাকসুতে সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন এবং বামপন্থি ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সেই সময়ে সাহিত্য আন্দোলনে তাঁর ঘনিষ্ঠ সতীর্থ কবিদের মধ্যে আছেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, জাফর ওয়াজেদ প্রমুখ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা সেই সময়ে ছিল সুবিদিত।
আলী রীয়াজের যে পরিচয়ে বিশ্ব অভ্যস্ত, সেই পরিচয় থেকে কিছুটা সরে এসে লিখছেন কবিতা। যা অনেকের কাছেই চমক! আলী রীয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছাড়াও শিক্ষকতা করেছেন ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে। সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন বিবিসিতে। এখন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। সম্প্রতি তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘টমাস ই. আইমারম্যান প্রফেসর’ পদে ভূষিত করা হয়। এই পদে তিনি ২০১৮-২০ সাল মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি মূলত বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, রাজনীতি ও সমাজে সহিংসতা, ইসলামি রাজনীতির গতিপ্রকৃতি এবং বৈশ্বিক সমসাময়িক বিষয়ে বিদ্যায়তনিক পর্যালোচনার জন্য তিনি বিখ্যাত। সিরিয়াসধর্মী এসব জ্ঞানকাণ্ডের পাশাপাশি প্রবাসে বসে তিনি বাংলাদেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখছেন কবিতা। যা প্রকাশিত হয়েছে মূলত তাঁর ফেসবুক একাউন্টে এবং দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সাময়িকীতে। ছাত্র জীবনের সাহিত্য প্রতিভার অনিঃশেষ ছোঁয়া রয়ে গেছে তার সমসাময়িক কবিতায়।
তাঁর কবিতার সমঝদার মেহেদী হাসান মনে করেন, প্রচুর জানার ফলে মানুষের ভেতর থেকে জীবন দেখার অভিজ্ঞতায় আলী রীয়াজ ঋদ্ধ। তিনি তাঁর লেখা কবিতাকে বিচ্ছিন্ন হতে দেন নি, নিজের থেকে। তাঁর কবিতার আবেগ কবিকে মাড়িয়ে যেতে পারে নি, বরং কবিই তার কবিতায় নিজের বক্তব্য চালিত করেছেন কবিতার সঙ্গে থেকেই; এটা কবিসত্ত্বার সঙ্গে কবির ব্যক্তিসত্ত্বার গভীর সংযোগ এবং ডেডিকেশনের ফসল।
এক আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘কিছু জিনিস যখন বলতে পারি না, আর কোনো কিছুতেই, তখন কবিতা লেখার একটা চেষ্টা করি।’ হ্যাঁ, আলী রীয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সমাজতান্ত্রিক স্বপ্নে তাড়িত হয়ে রাজপথে হেঁটেছেন। মিছিলে, স্লোগানে, কবিতায়, সাহিত্যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের নির্বাচনে, দৈনিক সংবাদ, বিচিত্রা অফিস; সর্বত্রই ছিল তাঁর সমাজ বদলের স্বপ্ন। বদলে যাওয়া সময়ের ততোধিক বদলে যাওয়া পৃথিবীর বুকে এই স্বপ্নবান কবিকে বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন,পাঠকের হাতে যেদিন আসবে, ‘স্বপ্নগুলো জেগে থাকে।’