মোহাম্মদ মুক্তার হোসেন। প্রায় ১৪ বছর আগে ২০০৮ সালের দিকে বারিধারায় এভিনিউ নামে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। লেকভিউ নামে গুলশান ২ এলাকার একটি রেস্টুরেন্টেও ওয়েটার হিসেবে কাজ করেছেন মুক্তার হোসেন।
মূলত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতেই ওয়েটার বেশে মুক্তার হোসেন রেস্টুরেন্টের ভেতরেই কেনাবেচা করতো নামিদামি ব্র্যান্ডের মদ। আর সে মাদক ব্যবসার তেলেসমতিতে ওয়েটার থেকে এখন শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন মুক্তার।
সেই টাকায় রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তুলেছেন ৫টি বার। যুক্তরাষ্ট্রে কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। সেখানে বসবাস করেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রাজধানীর উত্তরায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে কিংফিশার রেস্টুরেন্ট ও বারে অভিযান চালিয়ে ম্যানেজারসহ ৩৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এরপরই মুক্তার হোসেনের তথ্য বেরিয়ে আসে। তিনি বারটির মালিক। তবে অভিযানে মূল হোতা মুক্তারকে ধরতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। মুক্তার পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
আজ শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, লাইসেন্স না নিয়ে রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডের আড়ালে দেশি-বিদেশি মদের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করা হতো। রাজধানীর রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করা মুক্তার মাদকের ব্যবসা করে বনে গেছেন কোটিপতি। বৃহস্পতিবার রাতে সেই কিংফিশার বারে অভিযানে মিলেছে ৫ হাজার ৪০০ দেশি-বিদেশি মদের বোতল ও বিয়ার।
ডিবি জানায়, ছয়তলা একটি ভবনে দীর্ঘদিন ধরে বারটি চলছে। বারের কর্তৃপক্ষ কোনো নির্ভরযোগ্য অনুমোদন দেখাতে পারেনি। বারটি থেকে শতাধিক মানুষকে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় বার ম্যানেজারসহ ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মুক্তার হোসেন পলাতক। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন: আবু সালেহ, মো. মোহন, মুকুল, মো. সিব্বির আহম্মেদ, রাসেল, আবুল কাসেম মিন্টু, নাহিদ দারিয়া, শান্ত ইসলাম, আলিম উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন, রহমত আলী, খালেক সাইফুল্লাহ, ইমরান, মো. সাহান শেখ, মো. মোফাজ্জেল, ওবায়েদ মজুমদার, ইবাদত খান, রাইস উদ্দিন, রায়হান, মো. রুবলে, রিফাত, ফয়সাল, শরিফুল ইসলাম, রাসেল, জাহিদ হাসান, রওশন জামিল রাসেল, হুমায়ুন কবির, তোফাজ্জেল হোসনে, মো. রিয়াদ হোসেন, আল আমনি, কাইয়ুম, নয়ন দাস, শাওন দাস ও মাহমুদুল হাসান।
হারুন অর রশীদ জানান, ওই বারে প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষের যাতায়াত ছিল। তাদের মধ্যে সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষ রয়েছেন। শুধু মদ বিক্রি নয়, বারটিতে নারী নিয়ে অসামাজিক কার্যক্রমের অভিযোগের কথাও জানান তিনি।
ডিবি জানায়, মুক্তার হোসেনের আরও বার রয়েছে। মিরপুর, গুলশান ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি বার চালান তিনি।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল যে, উত্তরার ওই ভবনে গান-বাজনার নামে ছেলেমেয়েরা ডিজে পার্টি করছে। একইসঙ্গে সেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ মদ। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়।
প্রথমে ভবনের সাত তলায় গিয়ে ডিবির দল দেখে অনেক ছেলেমেয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। পরে ভেতরে গিয়ে দেখে সেখানে প্রচুর নিষিদ্ধ বিদেশি মদ ও বিয়ার। ডিবির দল ৫-৬ তলায় গিয়ে একই অবস্থা দেখতে পায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়েছে জানায় ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।
জেএন/পিআর