আসল নাম ফারুক। সে সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়া ডেঙ্গা গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে। তাঁর বকে যাওয়া জীবন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে তাঁকে সবাই টাইগার ফারুক হিসেবে চিনে।
সাতকানিয়ার এ সন্ত্রাসী হেন অপরাধ নেই, যা তিনি করেন না। নলুয়া এলাকার এক প্রভাবশালীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে টাইগার ফারুক অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
ঠুনকো বিষয় নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখানো, মৃত্যুর পরোয়ানাজারিসহ নানা ভয় দেখাতে পটু এ সন্ত্রাসী গত ৯ অক্টোবর পুলিশের হাতে আটক হয়ে এখন জেলের ১৪ শিখের ভেতরে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মো. আবদুল হান্নান বলেন, সন্ত্রাসী ফারুকের রয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী বাহিনী। ওই বাহিনীর অস্ত্রধারী ক্যাডার ফারুক। তাঁকে গ্রেফতারের সময় তাঁর বন্দিশালা থেকে এক গৃহবধূকে তিন সন্তানসহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ফারুক চলতি বছরের শুরুর দিকে পার্শ্ববর্তী আমিলাইশ ইউনিয়নের জহির উদ্দিনের স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে তুলে এনে বসবাস শুরু করে। সম্প্রতি অস্ত্র আইনের মামলায় ফারুক জেলে গেলে তখন ওই মহিলা পালিয়ে চলে যান স্বামীর কাছে।
কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে ফারুক ওই মহিলার নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে অপহরণ করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে মেয়েকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে ওই মহিলাকে আবারও জিম্মি করে ফারুক।
এ ঘটনায় তাঁর স্বামী গত ৬ অক্টোবর আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে লিপিবদ্ধ করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন সাতকানিয়া থানার ওসিকে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার ফারুককে গ্রেফতার করে সাতকানিয়া থানা পুলিশ। ১০ অক্টোবর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরআগে ১৩ আগস্ট রাতে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মহিউদ্দিনের বাসায় গুলি করে হত্যা চেষ্টা মামলায় ফারুক কারাগারে যান।
সেখান থেকে তার সহযোগীদের নানা তদবির ও চেষ্টায় ফারুককে জামিনে বের করে আনা হয়। কিন্তু জামিনে এসেই নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেন ফারুক।
এ ঘটনায় তখন ভিকটিমের নানা থানায় এজাহার দাখিল করেন। পরবর্তীতে ফারুক ফোনে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিলে তা আর বেশি দূর এগোয়নি। মামলা করলে ভিকটিমের মামাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তখন।
উদ্ধার গৃহবধূর স্বামী জহিরের অভিযোগ, টাইগার ফারুক নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতারের পর থেকে স্থানীয় মিন্টু বাহিনীর অনুসারীরা তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে নানাভাবে। তবে পুলিশের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে তা পেরে উঠেনি।
ফারুক আগেও একইরকম অপরাধ সংঘটিত করেছে। হিলমিলি এলাকার মনু আকতার নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন তিনি। সেই ঘরে একটি পুত্রসন্তান আছে। তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়নি। পরবর্তীতে তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা গ্রামের এক মহিলাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যান সন্ত্রাসী ফারুক। কিছুদিন পর তাঁকেও তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘরেও এক সন্তান রয়েছে। ফারুকের হুমকি ধমকিতে এই দুই পরিবারই এখন চরম অসহায় ও নিরাপত্তাহীনতায় বলে এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সন্ত্রাসী ফারুক নলুয়ায় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। এলাকায় চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদকসেবন ও বিক্রি, ভূমি দখল, মারামারি, বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে ভাড়ায় খাটাসহ সব ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত স্থানীয় মিন্টু বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ফারুক। তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, অস্ত্র আইনসহ বেশ কিছু মামলা আছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নলুয়ার পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা গ্রামের হাঙ্গরমুখ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করছে মিন্টু বাহিনী। বর্তমানে মিন্টু প্রবাসে থাকলেও এলাকায় তার হয়ে বাহিনী পরিচালনা করেন কামাল উদ্দিন ও টাইগার ফারুক।
স্থানীয় এক ইউপি সদস্যও তাদের অপরাধে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। তাঁরাই নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকার লোকজনের ভালোমন্দ।
জেএন/এফও/পিআর