আজ আইসিসি টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২২ শুরু হচ্ছে। শিরোনামে সেটি লেখা আছে। তবে ক্রিকেটের বেশির ভাগ বৈশ্বিক আয়োজন যেন শুরু হয়েও হয় না! কারণও আছে। মূল পর্বের আগে প্রথম পর্ব বলে একটি অধ্যায় আছে আজ অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের।
শ্রীলঙ্কা-নামিবিয়া ও আমিরাত-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচ। যদিও এদের সবার মূল পর্বে শিরোপার লড়াইয়ে নামার সুযোগই হবে না!
বিশ্বকাপের অংশ হতে এখন মোট ১৬টি দল অস্ট্রেলিয়ায়। আজকের দুটি ম্যাচের প্রতিপক্ষদের সঙ্গে প্রথম পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডও আছে। এই আট দলের মধ্য থেকে সেরা চারটি দল উত্তীর্ণ হবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে, কাপ জেতার লড়াইয়ের অংশ হতে পারবে। যেটাকে বলা হচ্ছে সুপার টুয়েলভ। এই সেরা বারোয় আগেই নাম লিখিয়ে ফেলা আট দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশও।
অবশ্য প্রথম পর্বকে বিশ্বকাপ ম্যাচের মর্যাদাই দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনও তাই আজ। যদিও আগামীকাল গা গরমের ম্যাচ খেলতে নামছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবং প্রথম টি-টোয়েন্টি জেতা ভারত। সাকিব আল হাসানের দল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ১৯ অক্টোবর ব্রিসবেনে, প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। আর মূল ম্যাচ ২৪ অক্টোবর, প্রতিপক্ষ এখনো অজানা। ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দলের বিপক্ষে নামবেন সাকিবরা।
বাংলাদেশের এই ম্যাচের আগে শুরু হয়ে যাবে কুড়ি ওভারের আগুনে খেলা! সুপার টুয়েলভ পর্ব শুরু হবে ২২ অক্টোবর, যা ঘটনাচক্রে গত ফাইনালের রি-টেক! গত বছর আমিরাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এবারের আসরের মূল পর্বের পর্দা উঠছে এমন বিস্ফোরক ম্যাচ দিয়ে। পরদিনই বিশ্ব-কাঁপানো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। মেলবোর্নের ৯০ হাজার টিকিট বহু আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের ঢোল পেটানোর সব আয়োজন টুর্নামেন্টের সূচিতেই করে রেখেছে আইসিসি।
অবশ্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জনপ্রিয়তা বেশ আগেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৭ সালে এই ফরম্যাটের বৈশ্বিক আসর শুরুর যাত্রাকালে এতটা আশা করেননি কেউ। বরং নিরাশা বেশি ছিল বলেই কিনা, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে অধিনায়ক করে তরুণ একটি দল পাঠিয়েছিল ভারত। সে আসরে ভারতের জয় নিশ্চিতভাবেই টি-টোয়েন্টির বাজার পাইয়ে দিয়েছে। ‘নিষিদ্ধ’ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল), ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রবর্তনে ক্রিকেটের রংই বদলে দিয়েছে।
কুড়ি ওভারের ঝটপট ক্রিকেটে একঘেয়েমিও নেই। প্রথম আসরেই যেমন এই ফরম্যাটের সেঞ্চুরি দেখে ফেলেছিল ক্রিকেটবিশ্ব। সেই সেঞ্চুরির মালিক অবধারিতভাবে ক্রিস গেইল। একই আসরে ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডকে ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। ২০১৬ সালের আসরে বেন স্টোকসের করা শেষ ওভারে ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের অবিশ্বাস্য ম্যাচ জেতানো অতিকায় ছক্কাগুলো এখনো কল্পনায় মাপজোখ করা যায়!
ক্রিস গেইল এবারের আসরে নেই। তাই বলে চার-ছক্কার ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। আকৃতিতে সমান না হলেও গেইলের স্ট্রাইক রেট ছাড়িয়ে গেছেন অনেকেই। ওয়ানডের চেয়েও দ্রুতগতিতে ম্যাচ পরিকল্পনা পাল্টেছে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে। এই সেদিনও ১২০ প্লাস স্ট্রাইক রেটের ব্যাটারের প্রশংসা হতো। এখন ১৩০-এর নিচের ব্যাটারদের আড়ালে কটাক্ষ করা হয়। বোলারের সামর্থ্য ফুটে ওঠে ‘ডট বলে’। যে বোলার যত বেশি ডট বল দেন, তাঁর তত সমাদর। শেষমেশ এই বিনা রানের বলগুলোই যে ম্যাচের ফল গড়ে দেয়।
দর্শক তো আর ‘ডট’ বল দেখতে মাঠে আসবে না। আয়োজকরাও বুদ্ধি করে উইকেটের ‘হাওয়া’ ছেড়ে রাখে, বল যেন ছোবল না মারে। ব্যাটার-ঘেঁষা ফরম্যাটে তাই বোলারদের লড়াইটা অপেক্ষাকৃত কঠিন। কৌশল এবং চিন্তাশক্তির ব্যবহারে ‘অসমতল ভূমি’র এই যুদ্ধ জিততে হয় বোলারকে।
গতবার আমিরাতের শুষ্ক আবহাওয়ায় অবশ্য বোলারদের জন্যই বরং সুবিধা বেশি ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় উল্টোটা হওয়ার কথা। তাই বলে পুরোপুরি ব্যাটারদের জন্য ডিজাইনার উইকেট হবে না। হবে স্পোর্টিং উইকেট, যে বাইশ গজে ব্যাটার-বোলার নিয়তই নিজেকে তাতাবে—হয় মারো নয়তো মরো!
এই যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখিয়ে মাঠে দর্শক টানে টি-টোয়েন্টি। বিশ্বকাপ মানে তো আরো এক পরত বাড়তি আকর্ষণ। আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশ এবং আর সব ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের তাবৎ ‘মাসলম্যান’দের যে দেখা যাবে একই রিংয়ে!
জেএন/এমআর