৩৭ শ’ কোটি টাকা লুটপাটঃ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা জানাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (আইএলএফএসএল) আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পাঁচ ডেপুটি গভর্নরসহ ২৪৯ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

- Advertisement -

এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

- Advertisement -google news follower

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জেনে বিষয়টি আদালতকে জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৭ অক্টোবর দিন রেখেছেন আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

- Advertisement -islamibank

গত ১৭ অক্টোবর দৈনিক কাল বেলায় ‘৩৭শ কোটি টাকা লুটপাটে দায়ী পাঁচ ডেপুটি গভর্নর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (আইএলএফএসএল) আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পাঁচ ডেপুটি গভর্নরসহ ২৪৯ কর্মকর্তার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিনটি বিভাগের এই কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং মেজর (অব.) মান্নান। নজিরবিহীন এ অনিয়মের কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির আলাদা তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মোট ১২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দুটি এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিআইএফসি ও আইএলএফএসএল থেকে অবৈধভাবে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে মোট ৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএলএফএসএল শুধু ভারতে কারাবন্দি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেই নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আর বিআইএফসি থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে ৬০০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও নিশ্চুপ ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এতে বলা হয়, নজিরবিহীন এ লুটের ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটির মোট সম্পদের তুলনায় দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আইএলএফএসএলের মোট সম্পদ ৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। আর বর্তমানে দায়ের পরিমাণ ৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ভারতে কারাবন্দি আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আর বিএফআইসির মোট সম্পদ ৯২৭ দশমিক ২৯ কোটি টাকা হলেও প্রতিষ্ঠানটির দায় ১ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠান থেকে মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নেওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে এভাবে লুটপাট ও আত্মসাতের সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটির পরিচালনা পর্ষদে যারা ছিলেন তারা সবাই ছিলেন পি কে হালদার ও মেজর (অব.) মান্নানের নিজস্ব লোক। তারা বিভিন্ন ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমানত সংগ্রহ করেছেন। এরপর এসব টাকা ঋণের নামে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার জামানতবিহীনভাবেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ দিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে এই লুটপাটের জন্য প্রধানত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগকে দায়ী করা হয়েছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী ৩ জন ডেপুটি গভর্নর, ৬ জন নির্বাহী পরিচালক, ১১ জন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং ১৫ জন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এবং বিভিন্ন পর্যায়ের আরও ১২৪ কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে।

এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের দুজন ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ মোট ৫১ জনকে দায়ী করা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের দুজন ডেপুটি গভর্নর, ৮ জন নির্বাহী পরিচালক, ৫ জন জিএমসহ মোট ২৯ কর্মকর্তার নাম এসেছে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM