ভোজ্যতেলের পর এবার অস্থির চিনির বাজার। হঠাৎ করে বাজারে চিনির সরবরাহ কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের চাপে গত ১২ দিনে দুই দফায় চিনির কেজি ২০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবু নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশিতে বেচাকেনা হচ্ছে চিনি। সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা বেঁধে দিলেও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বাজারগুলোতে এখন ১০০ থেকে দরে কেনাবেচা হচ্ছে।
অন্যদিকে ৮-১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এখন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। রাজধানীর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে পেঁয়াজের কিছুটা সংকট দেখা দেয়। সেই ছুতায় দাম বাড়তে পারে।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সরেজমিনে চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সর্বশেষ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহেও ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দর বেড়ে যাওয়ায় এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চিনির দাম বাড়ায় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। তখন প্রতি কেজি খোলা চিনির খুচরা মূল্য ৭৪ টাকা ও প্যাকেটজাত মূল্য ছিল ৭৫ টাকা। তবে সেই দামে কখনোই বাজারে চিনি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। ডলার ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়াসহ নানা কারণ দেখিয়ে গত সেপ্টেম্বরে আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। তাদের চাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২২ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির কেজি ৮৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করতে বলা হয়। এর ১২ দিনের মাথায় গত ৬ অক্টোবর ফের দাম বাড়ানো হয় পণ্যটির। এ দফায় কেজিতে আরও ৬ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে দুই দফায় খোলা চিনির দাম কেজিতে ১৬ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ২০ টাকা বাড়ায় মন্ত্রণালয়। দু’দফা দাম বাড়ানোর পরও খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি।
খাতুনগঞ্জে চিনির বাজারে অস্থিরতা চলছে। এখানে গত সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি কেজি চিনি ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। খাতুনগঞ্জ চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাতুনগঞ্জে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির কেজি পাঁচ টাকা বেড়েছে।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে খোলা চিনির সরবরাহ কম। আর প্যাকেটজাত চিনি সবখানে মেলেও না।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম জানান, বর্তমানে বাজারে চিনির সরবরাহ কিছুটা কম। সরকার খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম ৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে তারা মিলগেটেই ৯০ টাকায় বিক্রি করতে চায়। এ নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে। এ ছাড়া মিলাররা জানিয়েছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা থাকায় চিনি পরিশোধন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে মিল মালিকরা বাজারে চিনির সরবরাহ কমিয়েছেন।
এদিকে মিলাররা জানান, মিলগুলোর সামনে চিনির জন্য শত শত ট্রাক অপেক্ষা করছে। দুই সপ্তাহ উৎপাদন না থাকায় চিনি সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মেঘনা গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার জানান, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের চিনি উৎপাদন একেবারে কমে গেছে। যেখানে প্রতিদিন তাদের মিলে তিন থেকে চার হাজার টন উৎপাদন হতোদ এখন হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টন।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সচিব রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘চিনি সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। তবে কোনো কোনো মিলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে জানা নেই।’
দেশে বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কমে সর্বশেষ অর্থবছরে প্রায় ৩০ হাজার টনে নেমেছে। ফলে চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়।
এদিকে ৮-১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এ মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজের দাম বাড়তির খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ। লিটারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ, পাম তেলের (সুপার) দাম বেড়েছে ৩.১১ শতাংশ। পাশাপাশি ১৫.২২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে আদা।
জেএন/এমআর