গত দুই মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলমান সহিংস ঘটনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড (বিজিপি) এর মধ্যে এই প্রথম পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় নাফ নদী সংলগ্ন সীমান্তে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির নির্মিত সাউদার্ন পয়েন্ট সম্মেলন কক্ষে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে ফিরে গেছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি।
পতাকা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন টেকনাফ ২ নম্বর বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ, কক্সবাজারের গ্রুপ কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমদ তারিক কবির, অপস অফিসার মেজর মুতাসিম শাকিল বিল্লাহ।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, “পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশ-মিয়ানমারে সীমান্ত এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাড়াও অবৈধভাবে মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ও মাদকপাচাররোধ সম্পর্কে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দুটি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ আস্থা এবং নির্ভরতার পরিবেশ তৈরির জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।”
শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার আরও বলেন, “সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টার উড্ডয়ন, সীমান্ত এলাকায় ক্ষুদ্র এবং ভারি অস্ত্রের ফায়ারিং, জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে চলমান সংঘাতের জের ধরে যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো গোলা পতিত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার বিষয়ে বিজিপিকে আহ্বান জানানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়াও প্রতিবেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বিজিবি আশা করে যে, মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংকট অতি শিগগিরই সমাধান হবে এবং সীমান্তে চলমান বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি দ্রুত নিরসন হবে। বিজিবি, বিজিপি’র কাছে সব সময় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং সীমান্তে স্থিতিশীলতা রাখার জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের প্রত্যাশা করে। উক্ত বিষয়ে বিজিপি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।”
তিনি জানান, পতাকা বৈঠকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং সীমান্তে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে উভয় দেশের অধিনায়ক একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় নাফ নদী সংলগ্ন সীমান্তে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির নির্মিত সাউদার্ন পয়েন্ট রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে দু’দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমার থেকে দুটি স্পিডবোটে করে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে পৌঁছেন। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া পতাকা বৈঠকে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের নেতৃত্বে নয় সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এবং মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাও না ইয়ান শোর নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে পতাকা বৈঠকে অংশ নেন।
জেএন/এফও/এমআর