প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ সংসদে বলেছেন, ১৯৭৫ সালে যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিল তারাই এই দিনে জেল হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, যা একটি সংরক্ষিত স্থান। জাতির পিতার খুনি ছিল জিয়া ও মোশতাক এবং তারাই এই হত্যাকান্ড (জেল হত্যা) ঘটিয়েছে।’
বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ওই অনির্ধারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে বিজয়কে নস্যাৎ করার চেষ্টা হয়েছিল।’
কেন্দ্রীয় কারাগারের মত একটি সুরক্ষিত জায়গায় কিভাবে হত্যাকান্ড চালানো সম্ভব এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনী মুশতাক, জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। এরাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর জিয়াউর রহমান সেনা বাহিনীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছেন। জাতির পিতার হত্যাকারীদের সাজা দেওয়ার বদলে পুরস্কৃত করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যা করেছেন। ৩ নভেম্বরের ঘটনায় জিয়াউর রহমান ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ হত্যাকান্ডের বিচার যাতে না হয় সেজন্য দায়মুক্তি দিয়ে আইন করা হয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যার বিচার করেছে। বিচার কাজ চলার সময় ২০০১ এ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এই মামলার একজন আসামীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে বিদেশে পোস্টিং দেয়া হয়। তারা যে হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের কর্মকান্ডেই তা প্রমাণ হয়।
জিয়া যেমন খুনীদের পুরস্কৃত করেছিলেন তেমনি এইচ এম এরশাদও একই কাজ করেছেন বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী ফারুককে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন এরশাদ। অথচ ফারুক অবৈধ অস্ত্রসহ এনএসআইয়ের হাতে ধরা পড়েছিলো। তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অনেক বড় কথা বলেন। তিনিও খুনীদের নিয়ে রাজনৈতিক দল করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠন করে অনেক বাধা অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ এসব হত্যাকান্ডের বিচার করেছে। রায় কার্যকর করেছে। কিছু খুনী এখনো বিদেশে পালিয়ে আছে। তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘সামরিক শাসন দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে তারা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না। তারা মানবাধিকার কীভাবে সংরক্ষণ করবে?’ আওয়ামী লীগ সরকার হত্যাকারীদের বিচার করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পঁচাত্তরের পর আইনের শাসন ছিল না। বিচারের বাণী নির্ভৃতেই কেঁদেছে। আমি নিজেও বহুবার হাইকোর্টে গেছি, কথা বলেছি। বিচারের বাণীতো এখানে নির্ভৃতে কাঁদে। আমার বাবা, মা, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাব না। এই দেশে এমন আইন ছিল। ক্ষমতায় আসায় এ হত্যার বিচার সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে অভিশাপ মুক্ত না করলে দেশের অর্থনীতির উন্নতি করা সম্ভব হত না বলে উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অভিশাপ মুক্ত করতে পেরেছি। আবার যেন বাংলাদেশ কোন দৈবদুর্বিপাকে না পড়ে সেটাই চাই।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, তানভীর শাকিল জয় (শহীদ জাতীয় নেতা মনসুর আলীর নাতি) ও নাহিদ এজাহার খান এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মশিউর রহমান রাঙ্গাও আলোচনায় অংশ নেন।
জেএন/এমআর