খাগড়াছড়ির রামগড়ে দেশের ২৩তম স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আর এই স্থলবন্দর স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফেনী নদীর উপর রামগড়-সাবরুম অংশে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণকাজ শুরুর খবরে এ অঞ্চলের মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। রামগড় স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে দেশ। বাস্তবায়িত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।
খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুদর্শন দত্ত ও অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে রামগড় স্থলবন্দর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক খবর। একটা সময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে এটা বোধহয় আর হচ্ছে না। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় সফল সমাপ্তির দিকে এগুচ্ছে রামগড় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কাজ। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম স্থাপিত এই স্থলবন্দরের বিশাল কর্মযজ্ঞ এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনবে বলে তাদের বিশ্বাস।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী গত ১৮ অক্টোবর রামগড়ে এক অনুষ্ঠানে জানান, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আগামী মাসে রামগড় স্থলবন্দরের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে আসবেন। তিনি বলেন, রামগড়েই চালু হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত জানুয়ারিতে রামগড়ে এক জনসভায় বলেন, মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পের প্রসারে এটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি ওই সময় সাংবাদিকদের আরও জানিয়েছিলেন, রামগড় স্থলবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক (রামগড়-বারইয়ারহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার) উন্নয়নের কাজ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য খরচ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং সড়কটি চার লেনে উন্নীত হবে।
অন্যদিকে ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক ৮ মিটার প্রস্তের সংযোগ সেতুটি নির্মাণ ভারত করবে। এতে খরচ হবে ১১০ কোটি রুপি। নির্মাণকাল ধরা হয়েছে দুই বছর ৫ মাস। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনার কথা হাটহাজারিতে গত ৬ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।
ত্রিপুরার আগরতলা থেকে সাবরুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সড়কপথে রামগড়- চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার এবং সাবরুম-আগরতলার দূরত্ব ১৩৩ কিলোমিটার।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল- এই সাত রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্প সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার বহু আগেই রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর স্থাপনে উদ্যোগী হয়। রাজনৈতিক ও নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থমকে ছিল। বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে সহসাই বাস্তবরূপ পেতে যাচ্ছে বহুল কাক্সিক্ষত রামগড় স্থলবন্দরের দৃশ্যমান অবকাঠামো। এজন্য ভারত সরকার ফেনী নদীর ওপর চার লেনবিশিষ্ট আন্তর্জাতিকমানের একটি সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছে।
রামগড় পৌরসভার মহামুনি ও সাবরুমের আনন্দপাড়া হয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থলবন্দরকে ঘিরে বন্দর টার্মিনাল, গুদাম ঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ কাজও চূড়ান্ত হয়েছে। অবশ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারত দীর্ঘসময় ধরেই সচেষ্ট ছিল। এটা হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো (সেভেন সিস্টার্স) চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন দু’ দেশের ব্যবসায়ীরা।
পাহাড়ি নেতা মংপ্রু চৌধুরী ও রামগড় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন, সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় ব্যবসায়ীসহ সচেতন মহল আশার আলো দেখছে। রামগড় স্থলবন্দর যেন আঞ্চলিক গণ্ডি ছাপিয়ে বিশ্বব্যাপী সেতুবন্ধনের পূর্বাভাস।
জয়নিউজ/আরসি