চট্টগ্রামে হঠাৎ একাধিক শিশু নিখোঁজে চিন্তিত প্রশাসন

চট্টগ্রাম নগরে পুলিশী তৎপরতায় খুন, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধ কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি শিশু নিখোঁজের ঘটনায় অস্থির হয়ে উঠেছে পুলিশ প্রশাসন।

- Advertisement -

সম্প্রতি দুটি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং প্রশাসনের তড়িৎ তদন্তে খুনীকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্ধার করা হয়েছে নিখোঁজ তিন শিশুকে। তবে তিনজনের হদিস মিলছেনা এখনো।

- Advertisement -google news follower

এতে প্রশাসনে যেমন পড়েছে চিন্তার ভাজ তেমনি উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছে অভিভাবক মহল।

দুই শিশুকে ধর্ষণের পর খুন :
গেল ২৪ অক্টোবর চিপস কিনতে বের হয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় নিখোঁজ হয় মার্জনা হক বর্ষা নামে ৭ বছর বয়সী এক শিশু।

- Advertisement -islamibank

এর তিনদিন পর একই এলাকার একটি নালা থেকে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে পরে লক্ষ্মণ দাস নামে এক দোকান কর্মচারিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বন্দর থানার পোর্ট কলোনী এলাকার একটি পরিত্যাক্ত বাসা থেকে ৭ বছর বয়সী সুরমা আকতারের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় জড়িত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার হাজিপুর সিরাজ সর্দার বাড়ির আলী আজমের ছেলে ওসমান ফারুক মিন্টুকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জয়নিউজবিডি ডট কমকে বলেছিলেন, ‘গ্রেফতারের পর রিকশাচালক দোষ স্বীকার করে জানিয়েছে, শিশুটিকে বিরিয়ানি কিনে দেওয়ার কথা বলে রিকশায় তোলে। এরপর বন্দর থানা এলাকায় পরিত্যক্ত বাসায় নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে।

এখনো নিখোঁজ ৩ শিশু :

চট্টগ্রাম নগরে বেশ কয়েকজন শিশু অপহরণ বা নিখোঁজ হলেও এখনো খোঁজ মিলছেনা ৫ বছর বয়সী আলিয়া ইসলাম আয়াত, জুম্মান ইসলাম সিয়াম (১০) ও অনুভব মল্লিক তুর্যের। পুলিশ বলছে, তাদের সন্ধানে পুলিশ আন্তরিক।

চলতি মাসের ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন বাসা থেকে পাশের মসজিদে আরবি পড়তে গিয়েছিল আয়াত।

বাবা-মার একমাত্র সন্তান আয়াত এরপর থেকেই নিখোঁজ। এ ঘটনায় পরদিন তার বাবা ইপিজেড থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

আয়াতের বাবা মো. সোহেল রানা জয়নিউজবিডি ডটকমকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে মক্তবের উদ্দেশে বের হয় আয়াত। এর এক ঘণ্টা পর আমার বাবা মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে আয়াতকে না দেখে তার মাকে জানান।

পরে বাসার সামনের একটি ভবনের সিড়ির নিচে তার কায়দা (আরবি বর্ণমালা শিক্ষার বই) পাওয়া যায়। এখন ৮ দিন পার হয়ে গেলেও কেউ তার খোঁজ দিতে পারেনি।

মা তামান্না বলেন, আসমা নামের ছোট্ট একটি মেয়ে আমাকে বললো, একটা ভাইয়া কোলে করে আয়াতকে নিয়ে গেছে!’

ইপিজেড থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন, ‘তদন্ত করা হচ্ছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিশুটির সন্ধানে চেস্টা চলছে।

গেল ২০ নভেম্বর নগরের কোতোয়ালী থানার জামালখানের বাসা থেকে বের হওয়ার পর জুম্মান ইসলাম সিয়াম (১০) নামে এক স্কুল ছাত্রের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

সে নগরের শাহ ওয়ালী উল্লাহ ইনস্টিটিউটের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তার খোঁজ চেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন।

সিয়ামের বাবা মহিদুল ইসলাম জয়নিউজবিডিকে জানান, হারিয়ে যাওয়ার দিন একটি সিসি ক্যামরায় সিয়ামকে মেথরপট্টি দিয়ে মূল সড়কে চলে যেতে দেখা গেছে। পরের দিন দুটি সিসি ক্যামরায় সিয়ামের চলাফেরা দেখা গেছে।

একটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় সিয়াম ডিসি হিলের দিকে যাচ্ছে। অপর একটি ক্যামরার ফুটেজে দেখা যায় তাকে এক যুবক হাত ধরে বোস ব্রাদার্সের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে কোনো অপরাধী চক্র তাকে নিয়ে গেছে।

জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান বলেন, সিয়াম নিখোঁজের ঘটনায় আমাদের টিম কাজ করছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিয়ামকে পাওয়া যাবে।

এর আগে ২৬ অক্টোবর নিখোঁজ হন অনুভব মল্লিক তুর্য নামের এক ছাত্র। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের চকবাজারের একটি কোচিং সেন্টারে যাওয়ার উদ্দেশ্য ওইদিন সকালে অনুভব মল্লিক তুর্য বাকলিয়ার থানার শান্তিনগর ব্যাংক কলোনির বাসা থেকে বের হয়। এরপর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা।

তার বাবা তপন কান্তি মল্লিক বাদী হয়ে নগরের বাকলিয়া থানায় একটি জিডি করেন। নিখোঁজ অনুভব সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন মল্লিকের ভাইপো।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, অনুভব মল্লিক তুর্য ও তার আরেক বন্ধু বাসা থেকে ল্যাপটপ ও ৬ হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।

নিখোঁজ তিন শিশু উদ্ধার :

বন্দর থানার কলসীদিঘীর পাড় এলাকা থেকে অপহৃত তিন বছরের শিশু জেমিকে ফেনী সদর থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২২ নভেম্বর। গ্রেফতার করা হয় অপহরণকারী মো. জয়নাল আবেদিনকে।

জানা গেছে, লাকসাম থেকে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম আসছিলেন জেমি ও তার নানি। ২২ সেপ্টেম্বর নানির কোল থেকে অপহৃত হয় জেমি।

সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানা জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারী জয়নাল কৌশলে জেমিকে নিয়ে ফেনী চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

শুধু তাই নয়, আমেনা আক্তার খালেদার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে জেমিকে দত্তক দেয়। এসময় জয়নাল ১২ বছরের নিঃসন্তান খালেদার কাছে জেমিকে তার শ্যালিকার মেয়ে বলেও পরিচয় দেয়।

তার আগে গেল ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের নিউমুরিং জাহাঙ্গীর ব্রাদার্সের টিনশেড বিল্ডিংয়ের নীচতলা থেকে ৭ মাস বয়সের শিশু মো. আরিফ অপহরণ হয়। তাকে চট্টগ্রাম থেকে অপহরণ করে লক্ষীপুরের জঙ্গলে নিয়ে যায়।

২২ নভেম্বর শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণ চক্রের ৭ সদস্য কামরুল হাসান খান (১৯), তানজিলা আক্তার (১৮), রুবেল (২৫), মো. ফয়সাল প্রকাশ নাজিম উদ্দিন (২৩), মো. শফি প্রকাশ মিজানুর রহমান (২৫), সীমা আক্তার প্রকাশ কাঞ্চনী (৩৫) ও রোমানা আক্তারকে (২৮) গ্রেফতার করে।

ইপিজেড থানার ওসি আব্দুল করিম জয়নিউজবিডি ডটকমকে বলেন, আমরা প্রযুক্তি ও সোর্সের সাহায্যে অপরাধীদের চিহ্নত করে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। শিশু উদ্ধার করি।

তারও আগে গত ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকা থেকে অপহৃত শিশু আসমাউল হোসনাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের বাসার সাবলেট থাকা নাফিজা আক্তার সুমী অপহরণ করে কক্সবাজার নিয়ে যায়।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, গত ৭ নভেম্বর সকালে পাঁচ মাস বয়সী শিশু আসমাউল হোসনাকে বাসায় সাবলেট থাকা সুমির কোলে দিয়ে গোসল করতে যান মা তাসলিমা আক্তার।

বের হয়ে তিনি দেখেন তার মেয়ে ও নাফিজা আক্তার সুমী নেই। থানায় ‘মামলা দায়েরের পর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নাফিজা আক্তার সুমীকে গ্রেফতার ও শিশুটিক উদ্ধার করা হয়।

জেএন/এফও/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM