চলতি বছর তথা ২০২২ সালের জন্য বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এ তালিকায় খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী বিলি আইলিশ, ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কা, বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া, ইরানি পর্বতারোহী এলনাজ রেকাবি ও ঘানার লেখিকা নানা ডারকোয়া সেকিয়ামাহদের সঙ্গে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মেয়ে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া।
সানজিদা ইসলামের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন তিনি। পড়াশুনার পাশাপাশি বাল্যবিয়ের মতো বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করেন তিনি।
মনোনীত ১০০ নারীকে নিয়ে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিবিসি একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্বের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, অধিকার আন্দোলন, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান প্রভৃতি শাখায় এসব নারীকে নতুন তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাক্টিভিজম ও অ্যাডভোকেসি শাখায় রয়েছে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার নাম।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে যেসব দেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। বাল্যবিয়ে থেকে মেয়েদের কীভাবে রক্ষা করা যায়, সেই চেষ্টা করছেন সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া।
একটি স্কুলের উপস্থাপনায় বাল্যবিয়ের নেতিবাচক প্রভাব দেখে অনুপ্রাণিত হন ছোঁয়া। এরপর এটি বন্ধে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাল্যবিয়ের ঘটনা কানে এলেই বন্ধু, শিক্ষক ও সহযোগীদের নিয়ে পুলিশকে জানান তিনি। এজন্য ‘ঘাসফড়িং’ নামে সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেছেন ছোঁয়া।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ছোঁয়া এখনও ঘাসফড়িংয়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘাসফড়িং গ্রুপের নতুন সদস্যদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন তিনি। এ পর্যন্ত তারা ৫০টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
বিবিসির ২০২২ সালের জন্য বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পাওয়ার খবরটি ছোঁয়াকে জানান বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের সহকারী প্রযোজক তাসনিম খন্দকার।
বিবিসির মর্যাদাসম্পন্ন তালিকায় স্থান পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ছোঁয়া বলেছেন, ‘আজ সকালেই খবরটি পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। আমি এই সম্মান পেয়ে আনন্দিত।’
সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার চাকরিজীবী বাবা আমিনুল ইসলাম ও গৃহিণী মা লিজা আক্তারও মেয়ের এ অর্জনে আনন্দিত ও গর্বিত।
২০১৯ সালে নান্দাইল পাইলট গার্লস হাইস্কুলে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের ‘হ্যালো চেক’ অনুষ্ঠানে বাল্যবিয়ের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারেন ছোঁয়া। তখন তিনি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, বয়স ১৬ বছর। এরপর থেকে বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোরী মেয়েদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন ছোঁয়া।
ছোঁয়া বলেন, আমি মনে করি অল্প বয়সে বিয়ে করা যেকোনো মেয়ের জন্য খাঁচায় বন্দি থাকা জীবনের মতো। ময়মনসিংহে আমার আশপাশে একসময় বছরে ৪০-৫০টির মতো বাল্যবিয়ের ঘটনার কথা জেনেছি। তবে এখন সেই সংখ্যা ২-৩টিতে নেমে এসেছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে আমরা ঘাসফড়িং থেকে যেভাবে কাজ করে এসেছি, তাতে শতভাগ না হলেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছি।
ছোঁয়া বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে বন্ধু ও শিক্ষকদের পাশাপাশি নান্দাইলের ইউএনও, সাংবাদিক, স্থানীয় সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনসহ সবাই আমাকে সবসময় শতভাগ সমর্থন দিয়েছে ও সহযোগিতা করেছে। এজন্য সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
এ নিয়ে দশমবারের মতো বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। চলতি বছরের মনোনয়ন তালিকার জন্য যোগ্য নারীদের মনোনীত করতে আগে নির্বাচিত ১০০ জন নারীর মতামত নিয়েছে বিবিসি। তালিকায় ইরানে মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদে নারীদের সোচ্চার হওয়া ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে নারীদের দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দেয়ার ভূমিকা প্রতিফলিত হয়েছে।
বিবিসির বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় আরও স্থান পেয়েছেন ভারতীয় অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া, মার্কিন পপতারকা বিলি আইলিশ, অভিনেত্রী সেলমা ব্লেয়ার, রুশ পপসম্রাজ্ঞী আলা পাগচেভা, ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কা, ইরানি অভিনেত্রী জার আমির-ইব্রাহিমি, পর্বতারোহী এলনাজ রেকাবি ও ভেনেজুয়েলার অ্যাথলেট জুলিমার রোহাস প্রমুখ।
জেএন/এমআর