দুই দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসন। এ আসনেই চলছে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকা-। গত চার বছরে এ দুই দ্বীপে অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে যে জয়ী হবেন দলে তাঁর গুরুত্বও অনেক বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সাগরপাড়ের এ আসন নিয়েই নির্বাচনি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন জয়নিউজের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি শামীম সরওয়ার
কক্সবাজার জেলায় রয়েছে চারটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে কক্সবাজার-২ আসনটি গঠিত মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা নিয়ে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। কেন্দ্রের দৃষ্টি আর্কষণে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা করছেন সভা-সমাবেশ, উঠোন বৈঠক ও গণসংযোগ। দলের সর্বোচ্চ মহলে চালাচ্ছেন লবিং। আওয়ামী লীগ পুরোদমে প্রচারে নামলেও এক্ষেত্রে পিছিয়ে বিএনপি।
কক্সবাজার-২ আসনে বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্রবন্দর, এক্সক্লুসিভ টু্যুরিস্টজোন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব মেগাপ্রকল্পে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া দেশের সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হতে যাওয়া মহেশখালী-কুতুবদিয়া নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনটি সব দল কিংবা জোটের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনের সংসদ সদস্যও কেন্দ্রে সেভাবেই গুরুত্ব পাবেন এমনটি বুঝতে পেরেই সব দলই নিজ প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন চাচ্ছেন।
জেলা নির্বাচন অফিসের সূত্রমতে, একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ (২৯৫) মহেশখালী-কুতবদিয়া আসন। এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮১। এরমধ্যে কুতুবদিয়ার ভোটার ৮৪ হাজার ৪৬৫ এবং মহেশখালীর ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬।
আ’লীগে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫ প্রার্থী
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছেন একাধিক প্রার্থী। বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের পাশাপাশি মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, ২০০৮ সালে জামায়াত প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়া নৌকার প্রার্থী পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আনসারুল করিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ওসমান গণী ও আওয়ামী লীগের নারীনেত্রী ইসমত আরা ইসমু।
তাদের মধ্যে নৌকার সাবেক প্রার্থী ড. আনসারুল করিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ওসমান গণী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে জামায়াত প্রার্থীর কাছে হেরে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনসারুল করিম। তবে আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তিনি জয়নিউজকে বলেন, নেতাকর্মীরা আমাকে আবারও প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। কারণ সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এলাকার অনেক কাজ হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দলের জেলা সভাপতি হওয়ার পর সাংগঠনিক ভিত্তি আরও মজবুত করতে নিরলস কাজ করছি। এর সুফল আগামী নির্বাচনে পাওয়া যাবে। মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন সাগর দ্বীপ মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বর্তমান সরকার আমলে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়েই মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার প্রায় সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরে ও রাস্তাঘাটে সরকারের অনুদান নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেছে। গত চার বছরে এই দুই উপজেলায় অন্তত চার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ওসমান গণী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের জন্য কাজ করাই আমার রাজনীতি। তিনিই মনোনয়ন দেবেন। আমরা সবাই জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী, একইসঙ্গে আশাবাদী জয়ের ব্যাপারে। তবে মনোনয়ন না পেলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন তাঁর অনুসারীরা। আশেক উল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, মহেশখালীতে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আমার নির্বাচনি এলাকাসহ গোটা দেশের চেহারাই বদলে যাবে। মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলোর সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছে। ভূমি অধিগ্রহণ ক্ষতিপূরণের অর্থমূল্য তিন গুণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নানা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসনও করা হচ্ছে। এসব উন্নয়নের কারণে মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।
বিএনপিতে বিরোধ
নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ-কোন্দলে এ আসনে দুর্বল হয়ে পড়েছে বিএনপি। দল থেকে এর আগে বহিষ্কৃত হয়েছেন সাবেক এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ। সম্প্রতি ঘোষিত জেলার নতুন কমিটিতেও স্থান পাননি সাবেক এই এমপির অনুসারী নেতারা। এতে ফের বিরোধ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে মহেশখালী উপজেলা বিএনপিতে।
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মো. মাহফজুজুল্লাহ ফরিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী। আবার স্থানীয় কোনো নেতাকে প্রার্থী না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদকে প্রার্থী করার চিন্তা করছে দলের একাংশ। তবে সালাহ উদ্দিনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। কারণ তিনি প্রায় ডজন মামলার আসামি।
এদিকে দলের মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী দু’বারের সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ। তিনি জয়নিউজকে বলেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে আমার কর্মী-সমর্থক রয়েছে। ভোটারদের মধ্যেও আমি ব্যাপক জনপ্রিয়।
ছাড় দেবে না জামায়াত
জোটগতভাবে আসন বিন্যাস হলে এটি জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুল হক আযাদকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করছেন বিএনপির একটি অংশ। জোটগত বা একক, যাই হোক বিএনপিকে ছাড় দিতে রাজি নয় জামায়াত।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে আসনটি তারা পাবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন দাঁড়িপাল্লার হামিদুর রহমান আযাদ। আগামী নির্বাচনেও বিএনপি আসনটি জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদকে ছেড়ে দেবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রতীকে তারা নির্বাচন করতে না পারলেও স্বতন্ত্রভাবে লড়েও জয় পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ^াসী জামায়াত।
আসনটি চায় জাপাও
একক কিংবা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মো. মহিবুল্লাহও। তাঁর সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রাপ্ত কবির আহাম্মদ সওদাগর। শেষ পর্যন্ত দলের সমর্থন কে পান তা দেখতে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে জাতীয় পার্টির সমর্থকদের। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটগতভাবে নির্বাচন হলে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানানো হবে বলে জয়নিউজকে জানান জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি কবির আহমদ।