মোস্টওয়ান্টেড লিয়াকত ধরাশায়ী

বাঁশখালীর গন্ডামারায় আবু তাহেরকে হত্যার ঘটনা দিয়ে শুরু। ঘটনাটি ১৯৯৪ সালের। এরপরের মিশন ১৯৯৯ সালে। একই এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় নুরুল কবিরকে। এই দুটি হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী।

- Advertisement -

এ দুটি হত্যাকাণ্ডের পর বাঁশখালীজুড়ে আতংকের নাম লিয়াকত। একের পর এক নয়টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় তার নেতৃত্বে- এমন অভিযোগ লিয়াকতের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামজুড়ে রয়েছে নাশকতা, চেক জালিয়াতি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনসহ মোট ২৪টি মামলা। তার প্রভাব ছিল এতটাই, আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকার পরও তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। সরকারের তালিকায় ‘মোস্টওয়ান্টেড’ এই লিয়াকতকে এবার হতে হলো ‘ধরাশায়ী’।

- Advertisement -google news follower

মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রামের লালদিঘী এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে তাকে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়। এই থানায় তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জয়নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে লালদিঘী এলাকা থেকে বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

- Advertisement -islamibank

২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল বাঁশখালীর গন্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে আলোচনায় আসেন লিয়াকত। এসময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষ-বিপক্ষ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে গন্ডামারার মর্তুজা আলী, মো. আংকুর. জাকের আহম্মদ ও জাকের হোসেন নিহত হন। ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ আলীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি লিয়াকত।

এর আগে ১৯৯৪ সালে গন্ডামারার আবু তাহের ও ১৯৯৯ সালে গন্ডামারার নুরুল কবিরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব মামলাতেও আসামি তিনি। এছাড়া ২০১৪ সালে অস্ত্র ও ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, লিয়াকত বিএনপি নেতা হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও কোনঠাসা ছিল তার সন্ত্রাসের রাজত্বে। তার বিরোধিতা করলে পরিণতি হতো ভয়ংকর। প্রভাব খাটিয়ে গত ২০১৭ সালের ২৫ মে গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে তিনি বিজয়ী হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় একবারের জন্যও উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভা ও উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থিত হননি তিনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, পর পর ৩ সভায় অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ১৭ মাস ধরে প্রত্যেকটি সভায় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তার প্রভাবের কারণে প্রশাসন তাকে বরখাস্ত করেনি। পলাতক থেকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে সরকারি কাজ আদায় করতেন তিনি।

গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১৩ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যৌথ স্বাক্ষর করে চেয়ারম্যান লিয়াকতের বিরুদ্ধে রেজুলেশন করেছে উপজেলা সমন্বয় সভায়। এর পর থেকে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’

এদিকে লিয়াকত সংগঠনের কেউ নয়, তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, লিয়াকতের বির্তকিত কোন কর্মকাণ্ডের সাথে বিএনপি কখনও সম্পৃক্ত ছিল না। সে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি ছিলেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। ’

 

জয়নিউজ/ফরহান অভি/জুলফিকার

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM