চট্টগ্রামের আনোয়ার রাঙ্গাদিয়ায় বিসিআইসির নিয়ন্ত্রাণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ব সার কারখানা ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড-এ (ডিএপিএফসিএল) নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর ১১৭ তম সভায় সিদ্ধান্ত ছিল নতুন নিয়োগে অস্থায়ীদের অগ্রাধিকারের দেওয়া। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে নতুন ৯৪ জনকে নিয়োগে তোরজোর চলছে। এক্ষেত্রে বিপুল অংকের ঘোষ লেনদেন হচ্ছে।
আজ ২০ ডিসেম্বর (সোমবার) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৬ বছর আগে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়া ১৮১ জন শ্রমিক এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অস্থায়ী শ্রমিক শাহ জালাল বলেন, ডিএপিএফসিএল-এ জনবলসংকটের কারণে শূন্য পদের বিপরীতে ২০০৬ সালে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে আমরা নিয়োগ পেয়েছিলাম। দৈনিক পারিশ্রমিক ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বর্তমানে কর্মচারির সংখ্যা ১৮১ জন। ২০/২৫ বছর বয়সে আমরা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। এরপর ১৬ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে আসছি। বর্তমানে অনেকের বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করেছে অজুহাতে চাকরিচ্যুত করে তাদের জায়গায় ৪/৫ লাখ টাকা নিয়ে লোক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আমরা অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে গেটকিপার, ওয়েম্যান, খালাসি, ফায়ার ফাইটার, এমএলএসএস, লাইব্রেরিয়ান, কম্পাউন্ডার, ড্রাইভার ও ইঞ্জিনিয়ার পদে নিয়োজিত আছি। আমাদের এখন যে বয়স, তাতে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা অস্থায়ী শ্রমিক হওয়ার কারণে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন সময় চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দেওয়া হলেও আমাদেরকে স্থায়ী করা হয়নি। চাকরি স্থায়ী করার জন্য একাধিক বার সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৩ জুন ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানির পরিচালকম-লীর ১১৭ তম সভায় সিদ্ধান্ত হয় আমাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী করে নেওয়ার জন্য। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই কোম্পানী সচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত বোর্ড স্মারক-এ উল্লেখ করা হয়েছে, কারখানার জনবল সংকটের কারণে বিভিন্ন শাখায় কাজ যথাযথভাবে সম্পাদনে ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে কর্মচারী পদায়ন করা প্রয়োজন। কারখানায় ব্যবহ্নত সালফিউরিক এসিড পরিবহনের জন্য স্থায়ী কোন ড্রাইভার না থাকায় দৈনিক ভিত্তিক ড্রাইভার দিয়ে উক্ত কাজ সম্পাদিত হচ্ছে। এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে দৈনিক ভিত্তিক ড্রাইভার থাকায় কোন দূর্ঘটনা ঘটলে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই কাজে নিয়োজিত অভিজ্ঞ ড্রাইভারদেরসহ সকল দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদেরকে শূণ্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। পরিচালকমন্ডলীর বোর্ড সভায় কোম্পানি চেয়ারম্যান বলেন, কোন ক্রমেই ডিএপিএফসিএল এর জনবলের ঘাটতি রাখা যাবে না। দৈনিক ভিত্তিক ১৮১ জন শ্রমিকে সেট-আপ এর বিপরীতে বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হল।
সংবাদ সম্মেলনে শাহ জালাল বলেন, ১১৭ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের পরও বিভিন্ন সময় লোকবল নিয়োগ করা হলেও আমরা অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। গত ৭ আগষ্ট ডিএপিএফসিএল-এ ৯৪টি পদে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। যেখানে অস্থায়ীদের ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ আগষ্ট অস্থায়ী শ্রমিকরা নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে ডিএপিএফসিএল গেইটে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
আমারা খবর নিয়ে জেনেছি ডিএপি সার কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এবং উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য বোর্ড সভায় পরিচালকমন্ডলীদের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে অবৈধ এ অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তার দূর্নীতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ২০১৫ সালে বর্তমান বিভাগীয় প্রধান আলমগীর জলিল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সিলেট শাহ জালাল ফাটিলাইজার কোম্পানিতে ৪ কোটি টাকার দুনীতির দায়ে বরখাস্ত করা হয় । এছাড়া ২০১৫ সালে বদলী হয়ে ডিএপিএফসিএল এ যোগ দিয়ে পরে দূর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হন। তারা ডিএপি-তে প্রতিনিয়ত মালামাল ক্রয়ের নামে দূর্নীতি করছে।
ডিএপি এর নিয়োগ বাণিজ্য সরাসরি এমডি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা জড়িত। তা না হলে এত দ্রুত কেন নিয়োগ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ১৮১ জন অস্থায়ী কর্মচারিকে স্থায়ী করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মোঃ শাহজালাল চৌধুরী, মোঃ আরিফ হোসেন,মোঃ জানে আলম,মোঃ ইলিয়াস, আরিফ জামিল,টিপু বড়ুয়া, মাঈন উদ্দিন,যদু রাম, রুবেল ও ডিএপিএফসিএল ক্যাজুয়াল শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
জেএন/এফও/এমআর