সৃষ্টি দে : সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে যোগ হয়েছে বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। পাশাপাশি শেষ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা। দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষরা যেন এমন সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।
শীতকে উপেক্ষা করে টানা ছুটি কাজে লাগাতে ইতোমধ্যে পর্যটকের ঢল নেমেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। কানায় কানায় পূর্ণ সাগর তীরে হাজার হাজার পর্যটক উচ্ছাসে মেতেছেন। কেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে আনন্দ কোলাহলে মত্ত, কেউ সমুদ্র স্নানে মাতোয়ারা।
শুক্রবার সকাল থেকেই সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে দলে দলে নামতে শুরু করেন ভ্রমণ পিপাসুরা। সাগরের নোনা জলে নেমেই যেন তাদের সব প্রশান্তি।
টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভালো সাড়া পেয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ব্যাবসায়ীরা। আগামী ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বরের সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৫ তারিখ বড়দিনের ছুটিতে অগ্রিম হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়েছেন পর্যটকরা। এতে ২৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেলের সব কক্ষ বুকড হয়ে গেছে।
দুর দুরান্ত থেকে আসা অনেক পর্যটক ইতিমধ্যে বিপাকে পড়ে গেছেন। ঢাকা থেকে মেয়েকে নিয়ে সৈকতে বেড়াতে এসে এমন দুর্ভোগের কথা জানালেন মনিকা নামে এক গৃহিনী।
সে জানায়, মেয়ের স্কুল ছুটি,তার উপর তিনদিনের বন্ধ। সময়টাকে আনন্দ উল্লাসে রাঙ্গাতে আজ শুক্রবার সকালে কক্সবাজার এসেছি। এসেই পড়েছি বিপদে। সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রায় হোটেল-মোটেল, গেষ্ট হাউসে গিয়ে দেখি সব রুম বুকিং হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেলে কোন রুম নেই। পাশাপাশি শুক্রবার বুকিং থাকার কারণে যে সব পর্যটক একদিন আগে বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার পৌছেঁছে। তারাও রুম পেতে হিমশিম খাচ্ছে।
কারণ শুক্রবারের বুকিং করা গেস্টদের যথাসময়ে রুম সার্ভিস দেওয়ার জন্য অনেক হোটেল রুম ফাঁকা রেখেছে। ফলে শুক্রবার সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক পর্যটককে লাগেজ হাতে কলাতলী এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
কয়েকটি হোটেল ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হোটেল পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। কক্ষ পেতে ব্যাগপত্র নিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে ছোটাছুটি করতেও দেখা যায় বেশকিছু পর্যটককে।
অন্যদিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দেখা গেছে, হাজারো পর্যটকের ভিড়। কেউ বালিয়াড়িতে দৌঁড়ঝাপ, কেউ সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। যে যার মতো করে আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে কথা হয় রাঙ্গামাটি থেকে আগত পর্যন্ট দম্পতি সোহেল ও লুবনার সাথে। তারা জানায়, ‘অনেক দিনের ইচ্ছে, কক্সবাজার বেড়াতে আসব।
অবশেষে ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসতে পেরেছি। এখানে সৈকতে নেমে অসাধারণ এক অনুভূতি, দীর্ঘ যাত্রাপথের সকল ক্লান্তি ভুলে গেছি। খুব ভালো লাগছে।
জানা যায়, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। সঙ্গে রোববার (২৫ ডিসেম্বর) যোগ হয়েছে বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামতে শুরু করেছে।
সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি হিমছড়ি, দরিয়া নগর, পাটুয়ার টেক, ইনানী সৈকত, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধ বিহারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন পর্যটকদের ভিড়। তাদের আগমনে দারুণ খুশি পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বেড়াতে আসা পর্যটকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্ক আর নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি নিয়ে ভ্রমণে এসে তাদের খুব আনন্দ হচ্ছে।
টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভালো সাড়া পেয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ব্যাবসায়ীরা। আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, তিনদিনের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য। সবাই বেশ মজা করছে, নোনা জলে গোসল করছে।
তিনি বলেন- ‘পর্যটকদের সমুদ্র স্নান নিরাপদ রাখতে তিনটি পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম সবসময় নিয়োজিত রয়েছে। সতর্কতার সঙ্গে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে- পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার শিকার না হন।
জেএন/পিআর