মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতে হলে প্রতি মাসে অটোরিকশা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আহাম্মদকে দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা। আর তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক একরাম হোসেনকে (২০) খুন করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরে সীতাকুণ্ডের ইপসা গেটে আয়োজিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহাদাত হোসেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশে থাকা ইপসার পুকুর তল্লাশি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিরা হলেন সীতাকুণ্ডের পৌর সদরের পেশকারপাড়া এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে মো. জাহেদ হোসেন (২০), মধ্যম মহাদেবপুর (ভূঁইয়া বাড়ি) এলাকার মো. জাফরের ছেলে নূর আহাম্মদ (৪০), বাড়বকুণ্ডের মধ্যম মাহমুদাবাদ (তেলিপাড়া) এলাকার মৃত আজগর আলীর ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সাকিব (২০) এবং উত্তর মাহমুদাবাদ সমিজি মোল্লাবাড়ির মো. রুহুল আমিনের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে রানা (২৪)। হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার আসামি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় পৌর সদরের ইপসা গেট এলাকায় দুর্বৃত্তের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক একরাম। পরবর্তী সময় স্থানীয় লোকজন এবং পথচারীরা আহত একরামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাঁকে চমেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরদিন তাঁর বড় ভাই নুরুল হুদা বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিএনজিচালক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত ছিল না। মামলা পরবর্তীকালে পুলিশের পাশাপাশি ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করা হয়। বিশ্বস্ত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়।’
এসআই জানান, গত বুধবার থানা-পুলিশের কাছ থেকে স্ব-উদ্যোগে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন তিনি। সেদিন রাতে পিবিআই চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাজমুল হাসানের দিকনির্দেশনায় অভিযান চালিয়ে পৌরসভা এলাকা থেকে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। পরদিন তাঁদের চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলার পাশাপাশি চারজনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ খান শুনানি শেষে সাকিব ও রানার তিন দিন এবং নুর আহাম্মদ ও জাহেদ হোসেনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এসআই আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিরা জানান, অটোরিকশা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আহাম্মদের লাইনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর জন্য চালক একরামের কাছে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু একরাম তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় নুর আহাম্মদ তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হন। একপর্যায়ে একরামকে হত্যার পরিকল্পনায় তিনি তাঁর সহযোগী তিন অটোরিকশাচালক মো. জাহেদ, সাকিব ও রানাকে নিয়ে পৌর সদর বাজারে গোপন বৈঠক করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে একরামকে অনুসরণ করেন। রাতে ইপসা গেটে একরামের অটোরিকশা পৌঁছালে আসামি নুর আহাম্মদ তাঁর চালিত সিএনজি অটোরিকশা চাপিয়ে দেন এবং একরামের অটোরিকশার গতিরোধ করেন। এরপর আসামিরা একরামকে এলোপাতাড়ি মারধরের পাশাপাশি তাঁর বুকে, তলপেটে ও পিঠে ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর আহত করেন। এরপর আসামি নুর আহাম্মদ, রানা ও সাকিব পালিয়ে যান। তবে পালানোর আগে লোকজন এগিয়ে এলে আসামি জাহেদ আহত একরামকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর একরামের হাসপাতালে রেখে তিনি চলে যান। কারও সঙ্গে যাতে যোগাযোগ করতে না পারেন এ জন্য একরামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নিয়ে নেন জাহেদ।
পিবিআই চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ‘রিমান্ডে থাকাকালে আসামিরা হত্যার সত্যতা স্বীকার করেন। তাঁদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশাটি উদ্ধারের পাশাপাশি তা জব্দ করা হয়। শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আগে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। চাঁদা না দেওয়ায় আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পনা করে চালককে হত্যা করেন।’
জেএন/এমআর