দূর থেকে দেখে মনে হবে- মনোরম পরিবেশে সবুজে ঘেরা যেন এক বাগানবাড়ি। কাছে গিয়ে দেখা গেল বিশালাকৃতির ভগ্নপ্রায় দ্বিতল অট্টালিকা। পুরনো ইটের দেয়ালে রকমারি আগাছা, থরে থরে সাজানো ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের ভেতর ঝোঁপঝাড়। আর সেখানটার পুরোটাই এখন পাখি ও পোকামাকড়ের দখলে। একসময়কার প্রভাবশালী জমিদার শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর নির্মিত প্রাসাদটি এখন ঝরাজীর্ণ ও বিলুপ্তির পথে প্রায়। জমিদারহীন এ জমিদার প্রাসাদটির ভেতরের পরিবেশ অনেকটাই ভূতুড়ে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ জমিদার প্রাসাদ। অট্টালিকার গায়ে জমিদারি বেশভূষা থাকলেও এটি অনেকটাই অরক্ষিত। জানালা ও দরজার ফ্রেম থাকলেও নেই কোনো কপাট। প্রবেশমুখে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অট্টালিকার ইট, দরজা-জানালা ও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ কিছুই নেই।
অষ্টাদশ শতকের আগে তৈরী করা জমিদার বাড়ি নির্মাণ করতে এর ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার গার্ডার। দেখে মনে হবে- কয়েক বছর আগেই বুঝি এসব দেয়াল তোলা হয়েছে। ইট, সুরকি আর রড দিয়ে নিপুণ শৈলীর গাঁথুনির এ দ্বিতল ভবন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি ঘরের ভেতর ও ছাদে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক নির্দশন। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা দেখতে আসেন এ জমিদার বাড়ি। তবে এ এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন- জমিদার বাড়িটি এখন আর আগের মতো নেই, বাড়িটি তার রূপ ও জৌলুস দুটোই হারিয়ে ফেলেছে। আর এটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো মাথাব্যথা। ফলে বাড়িটির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুব কম সময়ের মধ্যে বিলুপ্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার সচেতন মহল।
জানাগেছে, শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার দুই সন্তান ওলি আহমেদ এবং মকবুল আহমেদ জমিদারির দায়িত্ব ভার নেন। তাদের মৃত্যুর পরবর্তী সময় তাদের সন্তানেরা জমিদারির দায়িত্ব নিলে একে অন্যের উপর বিভিন্ন অভিযোগ আনলে নিজেদের মাঝে বিভাজন শুরু হয়। এতে করে জমিদারির পতন হতে শুরু করে।
শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর বংশধর শোয়েব আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এখানে বসে জমিদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৬৩ সালে মাওলানা ভাসানী সহ অসংখ্য গুণী লোক আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে ভবনটি সংস্কার করলে এখানে পর্যটন স্থাপনা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
গুরতে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান- এটি একটি ঐতিহাসিক ভবন, এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। ভবনটি সংস্কার করা হলে এখানের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে এবং দেখতে অনেক পর্যটক ছুটে আসবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, জমিদার বাড়ি মিরসরাইয়ের ঐতিহ্য ও ইতিহাস বহন করে। মঘাদিয়া জমিদার বাড়ির বিষয়ে কিছু জানা নেই, তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিষয়ে জেনে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের সাথে ভবনটি সংস্কারের বিষয়ে কথা বলবো। তবে যেহেতু জমিদারের বংশধর বেঁচে আছে তাই তাদেরও উচিত ঐতিহ্য-ইতিহাসের ভবনটা রক্ষণাবেক্ষণ করা।
জেএন/জাবেদ/এমআর