মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছেন। ৭২’র সংবিধানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন করে দিয়ে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন। আমাদের নারীরা তাদের মেধা, যোগ্যতার ভিত্তিতে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছেন। জয়িতাদের হাত ধরেই দেশের সকল নারী এগিয়ে আসলে দেশ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।
আজ ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সম্মাননা প্রদান (জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ) অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর যৌথভাবে এ সংবর্ধনার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা প্রান্তে ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী ক্যাটাগরিতে ফেনী জেলার ছাগল নাইয়া উপজেলার মাটিয়াগোদা এলাকার আবুল বসরের মেয়ে লায়লা আক্তার’কে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও সম্মানি তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়া চট্টগ্রাম প্রান্তে আরও চার ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ ৪ জয়িতাকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও সম্মানি তুলে দেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
সম্মাননা প্রাপ্ত জয়িতারা হচ্ছে-অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া পৌরসভার বোয়ালিয়া পাড়ার মোহাম্মদ হোসেনের স্ত্রী নাছরিন সোলতানা জেরিন, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী রাঙ্গামাটি জেলা সদরস্থ কলেজ গেইটের ইমন তালুকদারের স্ত্রী সপ্তর্ষি চাকমা, সফল জননী নারী খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মিলনপুর পানখাইয়া পাড়ার মৃৃত মহেন্দ্র লাল চাকমার মেয়ে ইন্দিরা দেবী চাকমা ও সমাজ উন্নযনে অসামান্য অবদান রাখা নারী কক্সবাজার জেলা পৌর সদরের লাইটহাউজ পাড়ার মৃত আবদুল খালেক মিয়ার মেয়ে মনোয়ারা পারভীন। অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ জয়িতারা তাদের জীবন সংগ্রামের উপর মতামত ব্যক্ত করেন।
জয়িতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে বেগবান করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে জয়িতা কার্যক্রম শুরু করেন। জয়িতা কার্যক্রম বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নারীবান্ধব একটি বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। জয়িতাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস, উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি নেতাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে দুটি নতুন কমটি গঠন ও সব কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এক সময়ের ক্ষুধার্ত, বুভুক্ষু ও অনুন্নত বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। উন্নয়নের সব সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই জয়িতারা ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালের স্মার্ট, উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৩৫টি বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ৬৪টি জেলায় ৪৮ হাজার নারীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এর মাধমে তৃণমূল নারীদের প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করছে সরকার।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি’র সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জয়িতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা প্রান্ত থেকে যুক্ত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন, চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার এম.এ মাসুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী।
বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের জীবন-সংগ্রামের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) সাহিনা সুলতানা। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুঃ মাহমুদ উল্লাহ মারূফ ও মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, এনজিও, নারী সংগঠন ও সুশীল সমাজের নারী নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
জেএন/এমআর