চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে,প্রতিবাদে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ রেখেছেন বারৈয়ারহাট-চট্টগ্রাম রুটের বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠন। ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে বারৈয়ারহাট- শুভপুর-মাদারবাড়ি ও নিমতলী রুটের উত্তরা ও চয়েস পরিবহনের সকল যাত্রীবাহী বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরজমিনে বারৈয়ারহাট বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারে শতশত যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়। কিন্তু কাউন্টারে কোন বাস নেই। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রী সাধারণ।
পুরুষ যাত্রীরা দুরপাল্লার গাড়িতে দৌড়ে গিয়ে ঠাসাঠাসি করে উঠতে পারলেও বৃদ্ধ নারী ও শিশুরা ঘন্টার পর ঘন্টা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই বাড়তি দামে মাইক্রো, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ভাড়া করে গন্তব্যে যেতে চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সাধারণ সম্পাদক অলি আহমেদ জানান, চট্টগ্রাম- ধুম-শুভপুর রুটটি উত্তরা ও চয়েস বাস মালিক সমিতির নিয়োগকৃত লাইনমেনরা পরিচালনা করতো।
কিন্তু বারৈয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকন নিজেই কর্মি নিয়োগ দেন। লাইনের শ্রমিক কল্যান তহবিলের টাকা, মাজারের টাকা ও পৌরসভার টোলসহ গাড়ি প্রতি দৈনিক ৮০ টাকা হারে দুই শতাধীক গাড়ি থেকে মাসে ৫ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এছাড়া তার নিয়োগের কর্মীরা পরিবহন শ্রমিকদের ওপর কারনে অকারণে হামলা চালায় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উক্ত রুটের মালিক শ্রমিক যৌথ সিদ্ধান্তক্রমে উত্তরা ও চয়েস বাস বন্ধ রেখেছেন। মেয়রের ওই বাহিনীর অপসারণ ও চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি চালাবে না বলে জানায় শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
চট্টগ্রাম-ধুম-শুভপুর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার জানান, বর্তমানে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গাড়ীর আয় নেই বললেই চলে। তার উপরে মেয়র খোকন তার লোকজন দিয়ে লাইনম্যনের ৪৫টাকা, স্থানিয় একটি মাজারের ১০টাকা ও পৌরসভার টোল ২৫ টাকাসহ প্রতি গাড়ি থেকে ৮০টাকা করে আদায় করছেন।
এর বাইরেও তিনি প্রতি মাসে মালিক সমিতি থেকে ব্যক্তিগত ভাবে মোটা অংকের সম্মানি ভাতা আদায় করেন। তার এসব অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা উত্তরা ও চয়েস সার্ভিস বন্ধ রেখেছি। গাড়ি বন্ধ রাখায় তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ও জোর পূর্বক গাড়ি চালাতে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন।
মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, মেয়রের লাঠিয়াল বাহিনীর সাইফুল, সবুজ ও অয়নের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করছেন। তিনি চাইলেই এটার সমাধান করতে পারেন। তার একজনের কারনে শতশত মানুষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া তিনি জানান, এ ব্যাপারে মেয়রের সাথে জোরারগঞ্জ থানায় একটি সমঝোতা বৈঠক হলেও তিনি তা বাস্তবায়ন করেননি।
জোরারগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জাহিদ হোসেন জানান, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে লাইনমেনদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এসেছিল। তাদের সবাইকে মিলমিশ করে দিয়েছি, এর বাইরে আমি কিছু জানিনা।
অভিযোগের ব্যাপারে বারৈয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকনের ব্যাক্তিগত ফোন নাম্বারে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে অডিও বার্তা পাঠালেও তার উত্তর দেননি তিনি।
জেএন/পিআর