চট্টগ্রামের পটিয়ায় ১৫৩ টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে গত ৩ মাস ধরে নিয়মিত কমিটি নেই। ফলে বিভিন্ন স্কুলে দেখা দিয়েছে শৃংখলার অভাব। ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় কোথাও কোথাও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছেন শিক্ষকরা।
আবার কোথাও মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি সদস্যরা শিক্ষকদের সাথে করছেন অসৌজন্যমূলক ব্যবহার। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ।
কিছু কিছু স্কুলে শিক্ষকদের সাথে বিরোধ চলছে ম্যানেজিং কমিটির। এসব কারণে বিঘ্ন ঘটছে পড়ালেখাসহ দৈনন্দিন কাজের। তিন বছর মেয়াদি ম্যানেজিং কমিটির সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের নভেম্বরে।
গত বছরের নভেম্বরে স্কুলগুলোতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি গঠনের কথা থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস ম্যানেজিং কমিটির গঠনের কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিদ্যালয়গুলো।
এই বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু আহমদ জানান, শীঘ্রই ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন শুরু হবে। তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাশের বিধান রাখায় অনেক জায়গায় এই নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করলে স্থানীয় অনেক বিত্তশালী স্কুল উন্নয়নে এগিয়ে আসার সুযোগ পাবেন বলে তার অভিমত।
তবে এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন শিক্ষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক সরকারের এই সিদ্বান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তারা বলেন, প্রতিটি গ্রামেই এখন স্নাতক পাশ ব্যক্তি আছেন। তাদেরকে ম্যানেজিং কমিটিতে স্থান দিলে তারা শুধু উন্নয়ন কাজই নয় পড়ালেখার ব্যাপারেও শিক্ষকদের পরামর্শ দিতে পারবেন।
পটিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি স্বপন কান্তি নাথ জানিয়েছেন, কোন স্কুলেই এখন নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে স্কুলগুলো। এই নিয়ে প্রধান শিক্ষকরাও জটিলতায় পড়ছেন।
সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারন করে দেয়ায় এলাকার অনেক নেতা এতে নাখোশ। তাছাড়া ছাড়া একজন মহিলা ও একজন পুরুষ শিক্ষানুরাগী সদস্য আগে বাহির থেকে কো-অপ্ট করার বিধান থাকলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে তাদের অভিভাবক হওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়ায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। অনেকেই চান অভিভাবক না হয়েও স্কুল কমিটিতে সদস্য হতে।
পটিয়ায় ১৫৩ সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯৯৬৫ জন। উপজেলায় ৩৪টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন ১৮ জন শিক্ষক। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আওতাধীন কেজি স্কুল আছে ৬২ টি। সেখানে ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৯৭৮৭ জন। পটিয়া কোন আনন্দ স্কুল নেই বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু আহমদ।
অভিযোগ উঠেছে পটিয়া পৌর এলাকার স্কুলগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি স্কুলের শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। ছুটির আগে পরে তারা স্কুলের আশ-পাশে গড়ে তুলেছেন প্রাইভেট সেন্টার।
এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানসিক যন্ত্রনায় পড়ে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়ছেন। এতে শিক্ষকরা লাভবান হলেও অভিভাবকরা হচ্ছেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
পটিয়া পৌরসভার শশাংকমালা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর বাধ্যবাধ্যকতা নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। তাছাড়া এই বিদ্যালয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ম্যানেজিং কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের বিরোধের কারণে পড়ালেখার পরিবেশও বিঘ্ন ঘটছে দাবী তাদের।
এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার একাধিকবার তদন্ত করেছেন। প্রধান শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এলাকার সুধীজন চান শীঘ্রই স্কুলগুলোতে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
জেএন/পিআর