আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বিএনপির লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হটানো।
আজ সোমবার (৬ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, তাদের (বিএনপি) অবস্থান একটা। তাদের অবস্থান ক্ষমতায় যাওয়া নয়, তাদের অবস্থান শেখ হাসিনাকে হটানো। ক্ষমতায় যাওয়া তাদের লক্ষ্য নয়। এখন সর্বশেষ আমি যতটুকু জানি যতটুকু বুঝি রাজনীতি, বিএনপির এখন লক্ষ্যই হচ্ছে একটা, সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার মঞ্চ থেকে হটানো। তারা ক্ষমতায় যাবে— এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোনো আলোচনা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যা করি প্রকাশ্যে করি। গণতন্ত্র ব্যাকডোরে আলোচনা না। আলোচনা হলে প্রকাশ্যেই হবে। তবে সেই সুযোগ এখনো দেখছি না। আমরা কাউকে আলোচনার জন্য ডাকছি না। নির্বাচনকে সমানে রেখে এ ধরনের সংকট আমাদের দেশে নতুন নয়। কালো মেঘ ঘনিভূত হলেও তা কেটেও গেছে। আমি আশাবাদী মানুষ, আমি মনে করি এ সংকট কেটে যাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র আছে, নির্বাচন আছে। সরকার আছে, বিরোধী দল আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটেনি যার জন্য যে সংবিধান আছে, সেই সংবিধান পরিবর্তন করে কোনো প্রকার বিকল্প প্রস্তাব, কারো অনুকূল সমর্থন করার সুযোগ নেই। আমরা কোনো পরিস্থিতিতে সংবিধানের প্রশ্নে ছাড় দেবো না। সংবিধানের মধ্যেই সমাধান খুঁজতে হবে। এর বাইরে কোনো প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করবো না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবে এখানেও হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া হবে। তখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে পরিচালিত হবে। সংবিধানের মধ্যে থেকে তারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচন করতে হবে, সেই সংকটে আমরা পড়িনি।
বিএনপির আন্দোলন ও অর্থনৈতিক সংকট, কোনটি বড় চ্যালেঞ্জ? এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন বাস্তবে যত গর্জে ততটা বর্ষে না। কারণ তারা ছিল একটি গণঅভ্যুত্থানের আশায়, সেখান থেকে নেমে এলো নীরব পদযাত্রা। এখন তারা সেখান থেকে নিঃশব্দ মানববন্ধনে নেমে এসেছে। তাদের আন্দোলনের গতি দেখলে বোঝা যায় তারা যতটুকু জনগণের অংশগ্রহণ আশা করেছিল তা হয়নি। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোনো গণআন্দোলন সম্ভব না। তাদের নেতাকর্মীদের দিয়ে মূলত আন্দোলন ছিল, সেটিও এখন কমে গেছে। তাদের আন্দোলনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকট আছে। এটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শিগগির থেমে যাওয়ার লক্ষণ নেই। সেই যুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এখনো চলছে। এর ফলে সারা দুনিয়ায় সংকট আছে। জনজীবন, তেলের দাম, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ অনেক সংকট আছে। বাংলাদেশেও সংকট আছে। সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের জনগণ অনেক ধৈর্যশীল। সরকারের সদিচ্ছার প্রতি জনগণের আস্থা আছে। বিরোধীদল উস্কে দিলেও মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করেনি। মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকারের আন্তরিক প্রয়াসে জনগণের আস্থা আছে, তাই কোনো গণঅভ্যুত্থানের আশঙ্কা নেই।
ফখরুল বলেছেন কথা বললেই মামলা দেয়, এ বিষয়ে তিনি বলেন, কথা বললেই মামলা দেয়, প্রমাণ কী? তারা তো দেশে ৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার, সেই স্লোগানও দিচ্ছে। প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে নিয়ে বক্তব্য দিয়ে আক্রমণ করছে। তারপরও কি তাদের নেতারা জেলে আছে? যার যা খুশি বলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা ’৭১-এর চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। বিএনপির আন্দোলন মানেই আগুন সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে মারা, ভূমি অফিস পুড়িয়ে ফেলা। এসব বিএনপির আন্দোলন। আমরা মাঠে না থাকলে তারা এটা করবে না, তার গ্যারান্টি নেই। আমরা ক্ষমতায়, আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে। জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। তারা ক্ষমতায় থাকতে আমাদের দাঁড়াতেই দেয়নি। আর রাস্তায় ফখরুল সাহেবরা বের হচ্ছেন, কর্মসূচি পালন করছেন। কেউ তো কিছু বলছে না। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা তো তাদের হচ্ছে না।
জেএন/এমআর