গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে সিদ্দিক বাজার এলাকায় বিস্ফোরণ হওয়া ক্যাফে কুইন ভবনে উদ্ধার কাজ আবার শুরু হয়েছে।
বুধবার (৮ই মার্চ) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে ভবনটি স্টেবল করার পর পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস আ্যন্ড সিভিল ডিফেন্স।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দিবাগত ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা জানান, রাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে বিস্ফোরণের ফলে ভবনটির বেজমেন্ট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ও যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এ অবস্থায় ভবনটিতে উদ্ধার অভিযান চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কারণে যদি ভবনটি ধসে পড়ে তাহলে উদ্ধারকারীরা ব্যাপকভাবে হতাহত পারেন। তাই রাতে আপাতত উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়।
তিনি জানান, এসব বিবেচনায় রেখে মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ভবনটিতে উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। মূলত ভবনটির বেজমেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হবে আজ। ৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল ভবনটির সামনে সারারাত ছিলেন।
সিদ্দিক বাজারে ক্যাফে কুইন ভবনে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ১৬টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় আরও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দিবাগত রাত থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অস্থায়ী বুথ বসিয়ে পুলিশের উপস্থিতে মরদেহ করা হয়।
বুধবার সকালে ঢাকা জেলা প্রসাশনের কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস জানান, ১৬ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪ জন। এখন পর্যন্ত ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন, দুই জন ভবনের কর্মচারী, একজন বস হেলপর ও একজন পথচারী। নিখোঁজদের স্বজনরা মেডিকেলে এসে নাম লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। এছাড়া, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ১১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী হাফিজুল আমিন জানান, রাত থেকেই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিহতের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণে যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও আহতদের চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে।
বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মো. সুমন (২১), ইসহাক মৃধা (৩৫), মুনসুর হোসেন (৪০), মো. ইসমাইল (৪২), আল আমিন (২৩), রাহাত (১৮), মমিনুল ইসলাম (৩৮), নদী বেগম (৩৬), মাঈন উদ্দিন (৫০), নাজমুল হোসেন (২৫), ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), আকুতি বেগম (৭০), মো. ইদ্রিস (৬০), নুরুল ইসলাম ভুঁইয়া (৫৫), হৃদয় (২০), সম্রাট ও সিয়াম (১৮)।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল পাঁচটার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা এবং আরেকটি ভবন পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেজমেন্ট, প্রথম ও দোতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। আর পাঁচতলার নিচতলাও বিধ্বস্ত হয়েছে। ভবনগুলোতে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালেদ জানান, রাজধানীর ফুলবাড়িয়া এলাকায় বিআরটিসি কাউন্টারে পাশের একটি ভবনে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট কাজ করে।
জেএন/এমআর