ভারতে সর্বশেষ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছড়িয়ে পড়েছিল অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু। এবার বাংলাদেশের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া ঝাড়খণ্ড রাজ্যে থাবা বসিয়েছে ভাইরাসটি। গত সপ্তাহে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলায় বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত চার হাজার হাঁস-মুরগি মেরে ফেলা হয়। এর পর রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে দ্রুত সতকর্তা অবলম্বনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
তারা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে হাস-মুরগি বা যেকোনো পাখি কোয়ারিন্টিন ছাড়া আনা যাবে না, খামারে জৈব সুরক্ষা জোরদার করতে হবে এবং ডিম বা মুরগির মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ না করে খাওয়া যাবে না। সচেতন না হলে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তথ্যমতে, আক্রান্ত মুরগি বা পাখি থেকে অন্য পাখি বা মুরগি আক্রান্ত হতে পারে। আধা সেদ্ধ মুরগির মাংস বা ডিম খেলে, এমনকি আক্রান্ত পাখি ধরে হাত না ধুলে রোগটি মানবদেহেও সংক্রমিত হতে পারে। যদিও বাংলাদেশে এখনও বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তবে, সচেতন না হলে বিপত্তি ঘটতে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, দীর্ঘ সময় জ্বর, সর্দি-কাঁশি, গলাব্যথা, ডায়রিয়া এই ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) সহকারী প্রক্টর ডা. বশির আহমেদ জয় বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগীর জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া হতে পারে। এ ছাড়া কারও যদি জটিল রোগ থাকে তাহলে তার মৃত্যুও হতে পারে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর সাইফুল ইসলাম বলেন, খামারগুলোর সুরক্ষা ও সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে, ভারত থেকে কোনোক্রমেই জীবিত কিংবা মৃত মুরগি, ডিম বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আনা যাবে না। একইসঙ্গে পোলট্রি খামারগুলোতে জৈব সুরক্ষা জোরদার করতে হবে।
এদিকে বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় পোলট্রি খামারিদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। বাংলাদেশের কোনো জায়গা থেকে এখনও বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। সব রকমের প্রস্তুতি আছে। মাঠ পর্যায়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে যেন আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না। কারণ ভারতের আক্রান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি হয়েছে।
এ বিষয়ে কোনো চিঠি জারি হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবকিছু প্রকাশ করা যাবে না, যাতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক না ছড়ায়। জনস্বার্থে যা যা করা দরকার, তা আমরা করছি। বিশেষায়িত ভ্যাকসিন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা দ্রুত চলে আসবে।
জেএন/এমআর