দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি আয়োজিত ৩০তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩ এ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সার্টিফিকেট ও এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ১৯ মার্চ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
চিটাগাং চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি ও বিশেষ অতিথি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম. এ. লতিফ এমপি, চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২৩ কমিটির চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আক্তার হোসেন ও কো-চেয়ারম্যান মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালকবৃন্দ জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), অঞ্জন শেখর দাশ, মোঃ ইফতেখার ফয়সাল, এস. এম. তাহসিন জোনায়েদ ও তানভীর মোস্তফা চৌধুরীসহ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিসহ নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি বলেন, অনেকেই মনে করেছিল বাংলাদেশ শ্রীলংকা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ তা হয়নি। বাংলাদেশের অবস্থান শ্রীলংকা থেকে অনেক শক্তিশালী। করোনা অতিমারি, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এবং ডলার সংকটের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপর্যয় হলেও আমাদের খাদ্য উৎপাদন ঠিক থাকায় সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তিনি বলেন-পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যা নিরসনে আমরা ভূমি বন্টননামা কার্যকর করতে যাচ্ছি। এছাড়া ল্যান্ড ক্রাইম ডিসপোট কমানোর জন্য আমরা আইন প্রণয়নও করতে যাচ্ছি।
চট্টগ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে নিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, আনোয়ারায় অর্থনৈতিক জোন, লালখান বাজার থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে নান্দনিকতায় রূপ পেয়েছে নদী-পাহাড় ও সমুদ্রবেষ্টিত এই চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি ট্যুরিজম সেক্টরে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ভুটান, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপালের পর্যটক আকর্ষণ করতে চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে একটি ট্যুরিজম ফেয়ার আয়োজন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি চট্টগ্রামে স্থায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও একটি আন্তর্জাতিকমানের বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টার করার জন্য নগরীর কাট্টলী ও সী-বিচ এলাকায় ভূমি বরাদ্দ দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম. এ. লতিফ এমপি বলেন, সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শক্তিশালী অর্থনীতির দেশেরও ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। পৃথিবীর অন্যতম নির্ভরযোগ্য ক্রেডিট সুইস ব্যাংকও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশ দেউলিয়া হওয়া নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে কোভিড ও তৎপরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সকল ধরণের সংকট মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ব মন্দার মধ্যেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন-গত ১৪ বছরে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান সরকার দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেলের মাধ্যমে নদীর দুই পাড়ে শহর গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে চিটাগাং চেম্বারের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন-জাপানের সাথে চিটাগাং চেম্বার যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ানের মত অনেক দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে জাপান। এখন বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য একটি অন্যতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাপান। তাই আমাদেরকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম তথা দেশের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে অত্র চেম্বার। খেলার মাঠে মেলার পরিবর্তে রপ্তানি পণ্য প্রসারের জন্য চট্টগ্রামে পতেঙ্গা সী-বিচ ও বে-টার্মিনাল সংলগ্ন মধ্যবর্তী এলাকায় মেলার জন্য স্থায়ী ভেন্যু বরাদ্দের আহবান জানান তিনি। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরকে আরো গতিশীল করতে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল দ্রুত চালু করা এবং বে-টার্মিনাল প্রকল্পও দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করার জন্য ভূমি মন্ত্রীর প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি।
চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২৩ এর চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আক্তার হোসেন মেলা সফলভাবে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহ, আগত দর্শনার্থী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, নগর বিশেষ শাখাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২৩ কমিটির কো-চেয়ারম্যান মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠান শেষে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে জুরি বোর্ড কর্তৃক শ্রেষ্ঠ প্যাভিলিয়ন এবং স্টল এবং দেশীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে এ্যাওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরীতে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ প্রথম, আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্টস লিঃ দ্বিতীয় এবং কে ওয়াই টু টোন লিঃ তৃতীয়; স্টলসমূহের মধ্যে বিদ্যানন্দন প্রকাশনী, ড্রেস লাইন বাংলাদেশ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও যুগ্মভাবে তৃতীয় হয়েছে হ্যাপি ডে ও প্রাণ ডেইরী।
এছাড়া শ্রেষ্ঠ দেশীয় প্রস্তুতকারী হিসেবে শোয়েব কর্পোরেশন লিঃ সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। উল্লেখ্য, মেলা ২২ মার্চ’২০২৩ ইং বুধবার পর্যন্ত চলবে।
জেএন/এফও/এমআর