ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ হত্যা মামলা পুনরায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আওলাদ হোসেন মুহাম্মদ জুনাইদের আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের আলোচিত মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে সিআইডির প্রতিবেদনে নারাজির আবেদন করেন মামলার বাদীপক্ষ।
চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, দিয়াজ হত্যা মামলায় নারাজির আবেদন গ্রহণ করে পুনরায় পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দিয়াজের বোন অ্যাডভোকেট জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, সিআইডি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে একজনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির ভিত্তিতে। জবানবন্দি দেওয়া হয়েছে ৫ বছর পর। আবার জবানবন্দিতে বলেছেন, তারা কয়েকজন ওইদিন দিয়াজের বাসায় ছিলেন। তারা দিয়াজের রুমে ভাঙচুরের আওয়াজ পেয়েছিল। আবার সকালে উঠে দিয়াজের মরদেহ দেখেছে। আমার কথা হলো ঘটনার দিন যারা দিয়াজের বাসায় ছিলেন তারা আসামি হবে না? তারা সাক্ষী হয় কী করে।
তিনি আরও বলেন, দিয়াজের ময়নাতদন্ত প্রথমটা বাদ দিয়ে আদালতের আদেশে দ্বিতীয় বার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা হয়েছিল তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সিআইডি কোনও ব্যাখ্যা দেননি। যেখানে ময়নাতদন্তে হত্যা আসে, সেখানে মামলার প্রতিবেদনে কীভাবে আত্মহত্যা আসে। আর সিআইডি কোনও আসামিকে আটক করেনি, কাউকে রিমান্ডে আনেনি। আন্দাজে একটা গল্প বানিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, দিয়াজ ইরফান চৌধুরী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে চবির বাইরে দুই নম্বর এলাকায় নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দিয়াজের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেন। এর ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে পুলিশ।
তবে দিয়াজের পরিবার ও অনুসারীরা মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবি জানান। একই সঙ্গে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। মামলাটিতে ছাত্রলীগের সেই সময়ের সভাপতি আলমগীর টিপু, তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানকে আসামি করা হয়। দিয়াজ এবং আসামিরা সবাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছিলেন।
দিয়াজের মায়ের আবেদনে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এরপর ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর দিয়াজের মরদেহ তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দিয়াজের শরীরে আঘাতজনিত জখমের মাধ্যমে হত্যার আলামত আছে।’ পরে দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যা মামলা হিসেবে নিতে হাটহাজারী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। তবে নানা আলোচনা শেষে সিআইডি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (তথ্যগত ভুল) জমা দেয়।
প্রতিবেদনে সিআইডি উল্লেখ করে, বিবাহিত জীবন গোপন করা নিয়ে প্রেমিকা সায়মা জেরিন প্রিয়াংকার সঙ্গে টানাপড়েন, নিজ গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং পরিবারের সদস্যদের মানসিক নির্যাতনে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এছাড়া রাজনৈতিক গুরু ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের আশীর্বাদ প্রত্যাহারও তার আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।
জেএন/এমআর