পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গত মার্চ মাসে অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এই তথ্য জানিয়েছে।
অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন।
শুক্রবার এমএসএফের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন মার্চ ২০২৩ এবং আসকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ এবং সংস্থা দুটির নিজস্ব সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দুটি তৈরি করা হয়।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হুমকি ও হামলা বেড়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫ জন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহকালে নানাভাবে নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। মার্চ মাসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জন। এসব ঘটনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে।
বেড়েছে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনাও। মার্চ মাসে অন্তত ৯টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সাতজন নিহত এবং সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মার্চ মাসে ছয়জন নারী, ২১ জন পুরুষসহ মোট ২৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৫। এরমধ্যে তিনজন নারী ও ১২ জন পুরুষ।
মার্চ মাসে ৩৬১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৭২টি ধর্ষণের ঘটনা; ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় যা ২৯টি বেশি। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৪টি, ধর্ষণ ও হত্যা ছয়টি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মার্চ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন একজন। এ ঘটনায় অন্য একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কারা হেফাজতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে এক নারীসহ দুজনের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে তিনটি।
মার্চ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১০টি মামলায় সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সাংবাদিক, একজন বিএনপির, একজন আওয়ামী লীগের, একজন অভিনেত্রী, দুজন যুবক এবং একজন সরকারি কর্মচারী রয়েছেন।
রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা-সমাবেশে বাধার ৩১টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩৮৯ জন। নিহত হয়েছেন পাঁচজন। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ছয়টি।
আসকের প্রতিবেদন
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন পুলিশ কর্তৃক ও দুজন র্যাব কর্তৃক। সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন পাঁচ বাংলাদেশি। আহত হয়েছেন ছয়জন।
গত তিন মাসে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১০২টি। এতে নিহত হয়েছেন ছয়জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার ৩৭৪ জন।
এ সময়ে পাঁচটি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের তিনটি বাড়িঘরসহ একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একজন নিহত ও ৬২ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ১০৩টি বাড়ি ও ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত তিন মাসে ১২৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১২ জনকে। আত্মহত্যা করেছেন একজন নারী। ৩৪ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১১৬ জন নারী। এঁদের মধ্যে ৬৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং আত্মহত্যা করেছেন ৩০ জন।
জেএন/পিআর