আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এক মাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে বড় লিড পেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। মুশফিকের ১২৬ এবং সাকিবের ৮৭ রানের সুবাধে প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশের লিড ১৫৫ রান।
বুধবার (৫ এপ্রিল) শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৪০ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা বাংলাদেশকে টেনে তোলার দায়িত্বটা দারুণভাবে পালন করেছেন অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যানরা।
শেষ পর্যন্ত ৩৬৯ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ২৮ ওভার বল করে ১১৮ রানের খরচে ২ মেডেনসহ ৬ উইকেট শিকার করেছেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। বাকি চারটি উইকেট সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন আডায়ার ও হোয়াইট।
এরপর আইরিশরা আবারও ব্যাটিংয়ে নামলেও বাংলাদেশি স্পিনারদের তোপের মুখে পড়েছে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সাকিব-তাইজুলের ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা। মাত্র ১৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় তারা।
শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ২৭ রান করে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে। ইনিংস পরাজয় এড়াতে হলে বৃহস্পতিবার আইরিশদের আরও ১২৮ রান করতে হবে।
১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন জেমন ম্যাককুলাম।
সাকিবের পর জোড়া আঘাত হানেন তাইজুল। তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারি শার্প টার্নে ঢুকছিল স্টাম্পের দিকে। ব্যাট নামাতে দেরি করেন কমিন্স। বল আঘাত হানে প্যাডে। জোরালো আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
নিজের পরের ওভারে বোলিংয়ে এসেই আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম। তার আর্ম ডেলিভারি পেছনের পায়ে দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক; কিন্তু বল তার ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে।
এরপর কার্টিস ক্যাম্পারকে সাজঘরে ফেরান সাকিব। সাকিবের ডেলিভারি সামনের পায়ে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন কার্টিস ক্যাম্পার; কিন্তু ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ে লিটন দাসের গ্লাভসে। ক্যাম্পারের বিদায়ে ১৩ রানে ৪ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত দলীয় স্কোর আরও ১৪ রান বাড়িয়ে ২৭ রানে দিন শেষ করে আইরিশরা।
এরআগে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই মুমিনুল হকের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। স্কোরকার্ডে তখন জমা পড়েছে মোটে ৪০ রান। মার্ক আডায়ারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৭ রান করেন টাইগারদের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক।
বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তুলতে প্রতিআক্রমণের পথে হাঁটে সাকিব মুশফিক। ১৫৯ রানের জুটিতে টাইগাররা ম্যাচে ফেরে। এদিন মাত্র ৪৫ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন সাকিব। অর্ধশতক হাঁকানোর পথে হাঁকান ৯টি চার।
২০১৭ সালে টেস্টে সবশেষ সেঞ্চুরি হাঁকানো সাকিব এদিন এগিয়ে যাচ্ছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে ম্যাকব্রাইনের স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসেন তিনি।
৯৪ বলে ১৪ চারে ৮৭ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। সাকিব যখন আউট হন টাইগারদের রান তখন ১৯৯। লিড পেতে তখনও দরকার ১৬ রান। লিটন দাস এসে যোগ দেন মুশফিকের সঙ্গে।
শুরু থেকেই লিটন সাবলীল ছন্দে ব্যাট করতে থাকেন। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলেন অর্ধশতকের দিকে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হোয়াইটের বলে উইকেট বিসর্জন দিয়ে এসেছেন তিনি। ৪১ বলে ৮ চারে ৪৩ রান করে টাকারের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক ছিলেন মুশফিকও। ৬৯ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করা মুশফিক ১৩৫ বলে পূর্ণ করেছেন সেঞ্চুরি। এটি তার দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। ১২৬ রান করে মুশফিকও ফিরেছেন ম্যাকব্রাইনের হাতেই। ১৬৬ বলে খেলা নান্দনিক ইনিংসটিতে ১৫টি চারের সঙ্গে ছিল ১টি ছক্কাও।
দলের ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে মুশফিক যখন আউট হয় বাংলাদেশের রান ৩৩১। তখনো বড় লিডের স্বপ্নই দেখছে টাইগাররা। কিন্তু বাধ সাধেন ম্যাকব্রাইন।
দ্বিতীয় আইরিশ বোলার হিসেবে টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান তিনি। স্পিনারদের মধ্যে অবশ্য তিনিই প্রথম। এই স্পেলে তিনি একে একে ফেরান তাইজুল, শরিফুল ও এবাদতকে।
একদিকে উইকেট পড়তে থাকলেও মেহেদী হাসান মিরাজ দলের সংগ্রহ বাড়িয়ে নিতে থাকেন। এরই মধ্যে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক। শেষ ব্যাটার হিসেবে বেন হোয়াইটের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হওয়ার আগে ৬ চার ও ২ ছয়ে খেলেন ৫৫ রানের দারুণ ইনিংস।
জেএন/পিআর