বিদ্যানন্দের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন কিশোর

বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে জাকাত প্রদান করা যাবে কিনা, এ নিয়ে সোশ্যালে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার অনেকে এটা শরিয়ত সম্মত নয় বলেও জানাচ্ছেন।

- Advertisement -

সম্প্রতি এই ফাউন্ডেশনে জাকাত প্রদান করা নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। চারদিকে যখন বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা, সেই সময় এ নিয়ে সরাসরি কথা বললেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস।

- Advertisement -google news follower

সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার জবাব দেন কিশোর কুমার। সেখানেই তিনি এই ফাউন্ডেশনে জাকাত প্রদান প্রসঙ্গ কথা বলেন তিনি।

কিশোর কুমার বলেন, গত বছর বিদ্যানন্দ চেয়েছিল আর জাকাত নেবে না। ওই সময় এক হুজুর বলেছিলেন, কেউ জাকাত দিতে চাইলে কেন নেবেন না? সে কারণে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়।

- Advertisement -islamibank

তিনি আরও বলেন, আবার জাকাত না নিলেও প্রশ্ন তুলবেন অনেকে বা অন্য ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হবে। আর দাতাদের থেকে পাওয়া বিদ্যানন্দের মূল তহবিলের মাত্র ৫ শতাংশ জাকাত থেকে আসে বলেও জানান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

তাছাড়া গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কোলাজ ছবি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এটাকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির অতীতের অন্যসব কাজ এবং এর স্বচ্ছতা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।

আর সেসব সমালোচনা নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস। তিনি বলেন, যারা বিদ্যানন্দকে নিয়ে সমালোচনা করছেন, তারা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই করছেন। তারা মনে করছেন, বিদ্যানন্দ ভুল কিছু করছে, যা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আর এই ফাউন্ডেশনের কাজে স্বচ্ছতা না পেলে বা এটি অনৈতিক কাজ করছে—এমন মনে করলে যে কেউ বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। ইতোপূর্বে অনেকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন, তাদের জবাবও দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের সব পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা পুড়ে যাওয়া কাপড়গুলো ব্যবহার উপযোগী করে অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন তারকাদের কাছে বিক্রি করেন।

আগুন থেকে যেসব কাপড় রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে সেসব দিয়ে শিশুদের পোশাক, গয়নাসহ বিভিন্ন পণ্য বানিয়ে বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও জানায় ফাউন্ডেশনটি।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বলেন, এক নারী উদ্যোক্তার বানানো কিছু গয়নার ছবি সোশ্যালে দেখেই ওই সব গয়না তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল।

কিন্তু বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজ থেকে ছবি প্রকাশের সময় ওই নারী উদ্যোক্তারও কয়েকটি গয়নার ছবি পোস্ট করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পেজ থেকে ওই পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে।

এ ভুলের জন্য ফেসবুক লাইভে ক্ষমা চেয়েছেন কিশোর কুমার। এ জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি দায়ী এবং এ অপরাধে যদি তাকে পদ ছাড়তে বলা হয় তাতে কোনো আপত্তি নেই তার। তিনি বলেন, বিদ্যানন্দের ৮-১০টি ফেসবুক পেজ রয়েছে। এসব পেজে প্রায় ৩০ হাজার লেখা রয়েছে। তার মধ্যে ৩০টি লেখাতে ভুল থাকতেই পারে। লেখাগুলো বেতনভুক্ত কেউ লিখছেন না, তরুণ স্বেচ্ছসেবকরা লিখছেন।

তিনি আরও বলেন, কোনো ঘটনা ঘটার পর সেখানে কতভাবে কাজ করা যায়, সেই বিষয়টিই দেখাতে চেয়েছে বিদ্যানন্দ। কিন্তু কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, বিদ্যানন্দ বঙ্গবাজারে কাজ করার জন্য সব মনোযোগ বিদ্যানন্দের দিকে চলে গেছে। এই ফাউন্ডেশনের কারণেই নাকি অগ্নিকাণ্ডের পর যে ধরনের প্রতিবাদ হওয়ার কথা ছিল, সেটি হয়নি।

কিশার কুমার বলেন, বঙ্গবাজার তহবিলে দুই কোটি টাকা জমা হয়েছে। এই অর্থ অনুষ্ঠান করেই বিতরণ করা হবে। কিন্তু অনুষ্ঠান কোথায় হবে, তা আগে কেন জানানো হয় না—এ নিয়েও সমালোচনা করছেন অনেকে।

এর উত্তর হলো, আগে থেকে জানানো হলে অনেককেই চাঁদা দিতে হয়। প্রতিষ্ঠান এমনটা চায় না বলেই আগে থেকে স্থানের নাম ঘোষণা দেয়া হয় না।

আবার বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় জমি কিনেছে, যা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে ফেসবুকে। এ ব্যাপারেও জবাব দিয়েছেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া তার ব্যাখ্যাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

পাহাড়ের জমির মালিকানা প্রজেক্ট শেষে মূল মালিকের কাছে ফিরে যাবে। কক্সবাজারের রামুর জমিটি নগদ অর্থে তখনকার বাজার মূল্যে কেনা। যদি জমি বিক্রেতা আজও সে জমি ফেরত চান, তবে বিক্রিত মূল্য পরিশোধ করে (ডিপ্রিশিয়েশন এডজাস্ট করে) জমিটি ফেরত নিতে পারবেন।

আমরা এটা নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তিনি ফেরত নিতে রাজি হননি। এই নিয়ে তার পরিবারের একজন মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে, যেটাকে পরিবারের কর্তা এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন।

বিদ্যানন্দের জমিগুলোর মালিকানা বিদ্যানন্দের, আমার নামে নয়। বিদ্যানন্দের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সাইন করতে পারে। আমরা সব দলের মানুষকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছি। বিদ্যানন্দের ব্যাংক একাউন্টের টাকা একাধিক স্বাক্ষরে উঠে এবং দেশে না থাকার জন্য আমার সাইন ব্যবহার হয় না।

ফেসবুকের এক লাইভে শিখা নামে একজনকে আমার বোন দেখানো হয়েছে। শিখার পুরো নাম হচ্ছে সুলতানা জান্নাত। ধর্মপ্রাণ মুসলিম এই মেয়েটি বিদ্যানন্দের আমার প্রিয় এক স্বেচ্ছাসেবী ছিল, তবে রক্তের সম্পর্ক নেই।

রূপক অর্থে নাম ব্যবহার হয় পেজের পোস্টে। মজিদ চাচা নয়, আপনি সুলতান, রহিমা কিংবা কলিম চাচা নামেও অনেক পোস্ট পাবেন। গ্রামের নামগুলো সাধারণত কমন হয় এবং বিখ্যাত মানুষের নামেই থাকে। সে নামে একবার লিখে বিপদে পড়েছিলাম (মানহানি মামলার ঝুঁকি), কারণ একই নামে একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন।

একই ইভেন্টের ছবি একাধিক পোস্টে দেওয়া হয়। যেমন- গরু কেনা হয়েছে, গরু প্রসেস করা হয়েছে, রান্না হচ্ছে, আহার করছেন ইত্যাদি। বিদ্যানন্দের কাছে দাতব্য কাজটি অভিযাত্রার মতো। শুধু লক্ষ্যটা মূখ্য নয়, যাত্রাপথে আপনাদের সঙ্গী করতে চাই।

সীমিত রিসোর্সে প্রতিষ্ঠান চলে। এখানে খুব পেশাদার আপডেট দেওয়া সম্ভব হয় না। অনাথালয়ের দাতাদের কিছু অনুরোধ রাখতে পারিনি বলে ক্ষমা চাচ্ছি। এটা অল্প সময়েও সমাধান আমরা দেখছি না অল্প রিসোর্সের জন্য। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডার্ডে আমরা হয়তো যেতে পারব। কিন্তু তাঁদের মতো বিশাল এডমিন খরচের বোঝাটা আমরা নিতে চাইনি।

৯৫% বিশেষ খাবার আয়োজন স্পেসিফিক দাতার স্পন্সরে হয়। আয়োজনের আগেই শিডিউল জানানো হয় যেন তিনি উপস্থিত থাকেন। আয়োজন শেষে খাবার ছবি প্রমাণসহ পাঠানো হয়। আর যদি তাতেও বিশ্বাসযোগ্য না হয় তবে তাঁদের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।

বিদ্যানন্দ মূলত নিজেদের ফেসবুক পেজগুলোতে অনুপ্রেরণার পোস্ট শেয়ার (৩০,০০০ এর কাছাকাছি হবে) করে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের শেয়ার করা হয়ে থাকে। ৯৯.৯% শুদ্ধ হলেও কিছু অনুসারী ০.১% ভুলকে বড় করে দেখতে চাচ্ছেন। আমরা সে ভুলটাকেও শুদ্ধ করতে চাই।

বিদ্যানন্দের দশ বছরের ইতিহাসে কয়েকজন কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে নৈতিক স্খলনের জন্য। তরুণ বয়সে তাঁদের ক্যারিয়ার নষ্ট না করতে আমরা লিগ্যাল একশনে যাই না। এই মানুষগুলো কিছু বছর পর উল্টা ব্লেইম দিতে থাকে নিজের চলে যাওয়াটা জাস্টিফাই করতে। এতেও বেশ ক্ষতিতে পড়ে আমাদের ইমেজ।

পরিশেষে বলি, ভুল থাকবেই বিদ্যানন্দের অনেক পদক্ষেপে। শুধু বলতে পারি, কাজটা শুদ্ধভাবেই করার চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে শুদ্ধ করার সুযোগ না পেলেও আফসোস থাকবে না। মানুষের প্রতিষ্ঠান, মানুষই ভাঙবে, মানুষই গড়বে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM