বিশ বছর আগে আব্দুল জব্বার নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে খুন করে ভোল পাল্টে চট্টগ্রাম নগরীতে আত্মগোপন করে ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. মনজুর আলম।
গার্সেন্টসের চাকরি ছেড়ে ছদ্মবেশ নিয়ে ফিশারীঘাট এলাকায় ভ্যানগাড়ি দিয়ে মাছের ব্যবসায়ী সেজে দিব্বি ঘুরে বেড়াতেন নগরে। অবশেষে তার পালিয়ে বেড়ানোর দিন শেষ হয় গতকাল বুধবার। নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতার মো. মনজুর আলম (৫৬) কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার পুতুলনগরপাড়া এলাকার মৃত নূর আহমেদের ছেলে।
ঘটনা শুরু হয় ২০০৩ সালের দিকে। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ার মাছ ব্যবসায়ীরা নিজেদের এলাকা থেকে মাছ শিকার করে নৌকায় করে চট্টগ্রামের চাক্তাই নতুন সেতুর মৎস্য ঘাট বাজারে নিয়ে আসতেন এবং তা পাইকারি দরে বিক্রয় করতেন।
তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর নিহত আব্দুল জব্বার ও তার চাচাতো ভাই শওকত ও জয়নাল কুতুবদিয়ার ধুরুংছ এলাকার মাছের ঘের থেকে বিভিন্ন জাতের ৫২ টন শুঁটকি কিনে বিক্রয়ের জন্য চাক্তাই নতুন সেতু মৎস্য ঘাট বাজারে পাঠায়।
একইদিন সন্ধ্যায় তারা বাজারে পৌছে মাছগুলো বিক্রি করেন। মাছের আড়ৎ মালিক টাকা নিতে পরের দিন আসতে বলেন। কথামতো পরের দিন টাকা নিয়ে কুতুবদিয়ায় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন আব্দুল জব্বার।
পথিমধ্যে কর্ণফুলী নদীতে অপর একটি নৌকা থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে মনজুর আলম এবং তার দলের সদস্যরা।
আব্দুল জব্বার তাদের নৌকাটি পতেঙ্গা কয়লার গর্তের দিকে নিয়ে অবস্থান করলে দুস্কৃতিকারীরা এসে তাদেরকে ধরে ফেলে ও নৌকা থেকে মাঝিকে নদীতে ফেলে দেয়।
পরে জব্বারসহ অন্যদের অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে মঞ্জুর আলম, তার বাবা ও ভাইসহ ভিকটিম আব্দুল জব্বারকে হত্যা করে এবং অন্যদের রক্তাক্ত করে নদীতে ফেলে দেয়। পরদিন স্থানীয় লোকজন নদী হতে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় নিহত ভিকটিমের ভাই আব্দুর রহিম বাদী হয়ে মনজুর আলম এবং আরও ৩/৪ জনকে আসামি করে নগরের পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল মনজুর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালীন সময়ে মনজুর জামিনে গিয়ে পলাতক থাকে।
দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে তার অনুপস্থিতিতে ২০১৭ সালে ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার হত্যার দায়ে মনজুর আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
বুধবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মনজুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব-৭।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে মনজুর র্যাবকে বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছ থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে দীর্ঘ ২০ বছর সে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছিল।
সে জানায়, মনজুর আলম ১৯৯১ সাল থেকে বর্ণিত হত্যাকাণ্ডের পূর্ব পর্যন্ত নগরীতে গার্মেন্টস এ চাকরি করত। ২০০৬ সালে হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীন সে জামিন নিয়ে বের হয়ে পুনরায় হাজিরা না দিয়ে পালিয়ে যায়।
সে আইনশৃংখলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে তার পূর্বের পেশায় না গিয়ে ছদ্মবেশে ফিশারীঘাট এলাকায় ভ্যানগাড়ি দিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করে।
তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে জানায় র্যাব।
জেএন/হিমেল/পিআর