ভারতীয় এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশে এনে ধর্ষণ, তার নগদ ২১ লাখ টাকা ও সাড়ে ৭ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া এবং ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার এক যুবকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ভারতীয় নারী ফটিকছড়ি থানায় অভিযুক্ত মো. নাছির উদ্দিন (৩৪), তার ভাই নাজিম উদ্দিন (৩০) এবং মা রওশন আরা বেগমের (৫৮) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। স্থানীয় মো. নেজাম উদ্দিন (২৪) নামে এক দোভাষীর সহায়তায় তিনি মামলাটির এজাহার দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী ভারতীর নারীর নাম রহিমা (৪৯)। তার বাবার নাম মো. ইউনুস শেখ এবং বাড়ি ভারতের মুম্বাইয়ের শাসরিনগর বিহান্দি এলাকায়। অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের জাহানপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডে।
আসামিদের মধ্যে মো. নাছির উদ্দিন (৩৪) ও তার মা রওশন আরা বেগম (৫৮) গত ২৬ এপ্রিল থেকে কারাগারে রয়েছেন। আরেক আসামি নাজিম উদ্দিন (৩০) পলাতক রয়েছেন। তিনি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নাছির উদ্দিন ভারতে ভুক্তভোগী রহিমাদের এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন। রহিমার স্বামীর সঙ্গে সেখানে নাছিরের ভালো সম্পর্ক ছিল। এ সুবাদে রহিমার সঙ্গে তার কথা হতো। আনুমানিক তিন বছর আগে রহিমার স্বামী মারা যান। এরপর রহিমার সঙ্গে নাছির আরও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তিনি রহিমাকে বিয়ের ও সম্পত্তি বিক্রি করে বাংলাদেশে চলে আসার প্রস্তাব দেন। রহিমাও নাছিরের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। গত ৬ জানুয়ারি রহিমা নগদ ২১ লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার নিয়ে নাছিরের সঙ্গে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে আনার পর রহিমাকে নাছির তার বাড়িতে নিয়ে যান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফটিকছড়ি উপজেলায় নাছিরের বাড়িতে থাকাকালে রহিমাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে নানা সময় নির্যাতন করতেন অভিযুক্তরা। নাছির তার সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। একইসঙ্গে অভিযুক্তরা রহিমার কাছে থাকা ২১ লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেন। একপর্যায়ে তারা রহিমার কাছে পুনরায় ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে রহিমা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশের একটি টিম ২৫ এপ্রিল অভিযুক্ত নাছিরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রহিমাকে উদ্ধার করে। ওই সময় নগদ আড়াই লাখ টাকা এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার এবং ৩০ ভরি ওজনের এক জোড়া রূপার নুপুর উদ্ধার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফটিকছড়ি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক শনিবার (২০ মে) বলেন, ৯৯৯-এ কলের সূত্র ধরে ২৫ এপ্রিল রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী ভারতীয় নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতের নির্দেশে নিরাপদ আবাসে রাখা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাকে আদালতের আদেশে ভারতে পাঠানো হবে। অভিযানের দিনই অভিযুক্ত নাছির ও তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মামলা দায়ের করে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে ভারত থেকে দেশে আনা হয়েছে। এখানে আসার পর তারা একসঙ্গে ছিলেন। তবে তাদের বিয়ে হয়নি। যখনই ভুক্তভোগী নারী বুঝতে পারেন তার সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে, তিনি মোবাইলে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করেন। কাস্টমার কেয়ার ৯৯৯-এ বিষয়টি জানায়। এরপর ভুক্তভোগী নারীও ৯৯৯-এ যোগাযোগ করেন। পরে তাকে উদ্ধারের পাশাপাশি নগদ টাকা ও বিভিন্ন স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে এসআই নাজমুল হক বলেন, ওই নারীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা নাছির তার ভাইয়ের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশে আনে। এরপর টাকাগুলো মায়ের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। মা থেকে আবার নাছির এবং সবশেষে পুনরায় মায়ের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। এ কারণে মা ও ভাই আসামি হয়েছেন। অ্যাকাউন্টগুলো জব্দের জন্য প্রক্রিয়া চলছে।
জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সুদীপ্ত সরকার বলেন, ভারতীয় নারী ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দুজন কারাগারে রয়েছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে।
জেএন/এমআর