রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ডেমরা-যাত্রাবাড়ী। যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কদমতলী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে ঢাকা-৫ সংসদীয় আসন। ডেমরা-যাত্রাবাড়ি ঘনবসতি এলাকা হওয়ায় এ আসনে ভোটারও বেশি। তবে অন্যান্য এলাকায় স্থানীয়দের যে দাপট থাকে এখানে তা নেই।
ডেমরা-যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ এলাকার অধিকাংশ মানুষই বহিরাগত । তুলনামূলকভাবে বাসা ভাড়া কম হওয়ায় এখানে নিজেদের অস্থায়ী নিবাস গড়েছেন অনেকে। আবার এ এলাকায় জমির দাম কম হওয়ায় অনেকেই অন্য জেলা থেকে এখানে এসে বাড়ি করেছেন। এখানে বিভিন্ন জেলার লোক থাকায় ভোটাদের মধ্যে প্রার্থীদের নিয়ে আহামরি কোনো স্বপ্ন নেই। তবে এলাকার উন্নয়ন সবাই চান।
ঢাকা-৫ আসনটি রাজনীতির মাঠে গুরুত্ব বহন করে বেশ কয়েকটি কারণে । প্রধানত রাজধানী ঢাকাকে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে অচল করতে ডেমরা-যাত্রাবাড়ীর উপর নির্ভর করতে হয়। এ কারণে আওয়ামী লীগ কি বিএনপি এ আসনে সব সময়ই শক্ত প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করে, যাতে রাজনীতি ও রাজধানীর প্রবেশদ্বার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। পুরো এলাকায় তার বেশ প্রভাব। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার প্রভাব আছে। বয়সের ভারে ন্যূব্জ হলেও রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় তিনি। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জয়নিউজকে হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এটা আমার বিশ্বাস। কারণ, আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে দলের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার উন্নয়ন করেছি। এ বিবেচনায় এ আসনে আমার বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই।
এদিকে নিজেকে হাবিবুর রহমান মোল্লার বিকল্প মনে করেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না। তিনি বলেন, আমি তরুণদের এক করতে পেরেছি। দলে কোনো গ্রুপিং হতে দিইনি। তাই আমি দলের মনোনয়ন চাইব।
এ আসনে বিএনপি প্রার্থী নিয়ে ঝামেলা আছে বেশ । ভোট ও জোটের হিসেবে এবার এ আসনে প্রার্থীতে চমক থাকতে পারে। এমনই আভাস মিলেছে এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে। নানা কারণে সমালোচিত সাবেক সাংসদ ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন বিএনপির মনোনয়ন চান এবারও। কিন্তু তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি সহজভাবে মেনে নেবেন না দলের অনেকেই। কারণ, এলাকায় তাকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তার কারণেই বিএনপি গত নির্বাচনে এ আসনে জিততে পারেনি বলে অভিযোগ খোদ বিএনপির নেতাদের ।
সালাহউদ্দিনের আসনে বিএনপির অন্য প্রার্থীরা সক্রিয়। তারা হলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি নবী উল্লাহ নবী। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করেছেন। তার ধারণা, দলের দুঃসময়ে তিনি পাশে ছিলেন। এখনো আছেন। আগামীতেও থাকবেন। সুতরাং তিনি মনোনয়ন চাইবেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন। না দিলে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে বিভক্তি চাই না।
এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন দলের কেন্দ্রীয় গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও পেশাজীবী নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি ও ডেমরা ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন রতন।
মনোনয়ন চাইবেন বিজেপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদও। তবে কে পাবে বিএনপির মনোয়ন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে হাইকমান্ড। এমনটাই জানালেন দলটির সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা।
এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর ও ঢাকা মহানগর জাসদের সভাপতি শহীদুল ইসলাম এ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।