টাইব্রেকারের পঞ্চম শট, মোহামেডানের কামরুলের নেয়া শটটি গোললাইন অতিক্রম করার পরপরই কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডানের উল্লাস। পুরো ডাগ আউট ফেটে পড়ল আনন্দে। গ্যালারিতেও বয়ে যায় সাদা-কালোর উল্লাস। মূল খেলা ৪-৪ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতল মোহামেডান।
১৯৮০ সালে শুরু হওয়া ফেডারেশন কাপের অভিষেক চ্যাম্পিয়ন ছিল মোহামেডান। তবে যৌথভাবে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে শিরোপা ভাগ করে নিয়েছিল তারা। ঢাকার ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী সাদাকালো দলটির এক বিদেশি খেলোয়াড় আজ করলেন বিশেষ এক ইতিহাস। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আর কোনো ফুটবলারের চার গোল করার কৃতিত্ব নেই। আসরের ৪৩ বছরের ইতিহাসে এমন বিরল রেকর্ড গড়লেন মালির ফুটবলার দিয়াবাত।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ যেন ফিরে এসেছিল কাতার বিশ্বকাপের লুসাইলের ফাইনাল। সেখানে আর্জেন্টিনা দুই গোলে লিড নিয়েছিল, এরপর ফ্রান্স জোড়া গোল করে সমতা আনে। আজকের ম্যাচেও এমন হয়েছে। আবাহনী দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মোহামেডান ২-২ এ সমতা আনে। পরে অবশ্য এই ম্যাচে ৪-৪ গোলের সমতা আসে এবং টাইব্রেকারে ফল নির্ধারিত হয়।
ম্যাচের প্রথমার্ধে আবাহনী ২-০ গোলে লিড নিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধে চার মিনিটের ব্যবধানে মোহামেডান এই দুই গোল পরিশোধ করে। দুটি গোলই করেন দিয়াবাত। এর কিছুক্ষণ পরই আবার আবাহনী গোল করে লিড নেয়। ৮০ মিনিটে সুলেমান দিয়াবাতের হ্যাটট্রিকে মোহামেডানও ম্যাচে সমতা আনে। ফেডারেশন কাপের ফাইনালের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম হ্যাটট্রিকের ঘটনা।
নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ গোলের সমতায় খেলা শেষ হয়। ফলে আট বছর পর ফেডারেশন কাপের ফাইনাল অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। বিশ্বকাপের ফাইনালের মতোই বাংলাদেশের ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও অতিরিক্ত সময়ে একটি করে গোল হয়।
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে আবাহনী চেপে ধরে মোহামেডানকে। গোলরক্ষক সুজন দুর্দান্ত দুটি সেভ না করলে মোহামেডান ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে পারত।
রেফারিংয়ের মান নিয়ে আপত্তি তোলা মোহামেডান অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি পায়। অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতকে ফাউল করলে রেফারি আলমগীর পেনাল্টির বাঁশি বাজান। এখান থেকে দিয়াবাতের গোলে মোহামেডান ম্যাচে প্রথমবারের মতো লিড নেয়।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন। বদলি গোলরক্ষক বিপু মাঠে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই রহমতের গোলে সমতা আনে আবাহনী। ফলে ৪-৪ গোলে সমতায় পৌছা ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়ায়।
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও এমবাপের ন্যায় সুলেমান প্রথমে শট নিতে আসেন। সুলেমান গোলও করেন। আবাহনীর প্রথম শটটি মিস করেন রাফায়েল। মোহামেডান টাইব্রেকারের শুরুতেই লিড নেয়।
পরে মোহামেডানের চতুর্থ শট মিস হলে টাইব্রেকারে সমতা আনার সুযোগ ছিল আবাহনীর। বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার কোস্টারিকান ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস ওই শট মিস করেন।
পঞ্চম শটে কামরুল গোল করলে ১৪ বছরের শিরোপা বন্ধ্যাত্ব ঘোচায় মোহামেডান।
প্রথমবারের মতো আবাহনী-মোহামেডানের ফাইনাল ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত হয়। কুমিল্লাবাসী অসাধারণ একটি ম্যাচের সাক্ষী হয় আজ। কর্মব্যস্ত মঙ্গলবার ও জৈষ্ঠের গরমের মধ্যেও ভরদুপুরে যারা এসেছিলেন তারা সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম সেরা ম্যাচের সাক্ষী হয়েছেন। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামও যেন চেয়েছে মোহামেডানের হাতেই উঠুক শিরোপা। পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া মোহামেডান ও কুমিল্লার সন্তান বাদল রায়ও যেন দলের এমন পারফরম্যান্সে তৃপ্তি পেয়েছেন। প্রয়াত এই ফুটবলারের উদ্যোগেই এটি মোহামেডানের হোম ভেন্যু হয় এবং এখন দেশের অন্যতম সেরা ফুটবল ভেন্যু।
জেএন/এমআর